দুর্যোধন কি খলনায়ক ছিলেন ? Evil Durjadhana was really evil ?? (MAHABHARAT stories)
যেকোনো কাহিনীতে একটি বা
একাধিক খল চরিত্র থাকে । ঠিক তেমনই মহাভারতেও একাধিক খল চরিত্র
দেখা যায়। Mahabharat,
Ramayan কে হাজার হাজার বছর ধরে
নানা
রকম
ভাবে
ব্যাখ্যা করা হয়েছে আর
ভবিষ্যৎ ও
হবে। এই দুই
মহাকাব্যে বর্ণিত বিশেষ
উল্লেখযোগ্য Dark Shade character হলেন রামায়ণ
এর
রাবন আর মহাভারত এর
দুর্যোধন। রাবন
নিয়ে
না হয়
অন্য
লেখায়
কিছু
বলার
চেষ্টা
করবো।
আজকে
আমার লেখার বিষয় দুর্যোধন।
দুর্যোধন
কে জানতে হলে আমাদের দুর্যোধন সম্পর্কে কিছু কথা জানা জরুরি। মহাভারত
এর খল নায়ক হিসেবে বিশেষ পরিচিত এই রাজকুমার জন্মেছিলেন ভারত বিখ্যাত হস্তিনাপুর
এর কুরু বংশে। তার পিতা ও মাতা ছিলেন কুরু রাজ ধৃতরাষ্ট্র
ও গান্ধার রাজকন্যা গান্ধারী।
। দুর্যোধন এর পিতা
ধৃতরাষ্ট্র ছিলেন কুরু বংশের বড় সন্তান । কিন্তু তিনি সিংহাসন পাবেন
না , কারণ তিনি জন্ম থেকেই অন্ধ । তার জায়গায় রাজা হলেন ছোটভাই পান্ডু।
কিন্তু কিন্দম ঋষির শাপ এ তিনি impotent হয়ে যাবার পর সিংহাসনের মোহ
ত্যাগ করে দুই স্ত্রী কুন্তী ও মাদ্রী কে নিয়ে নিজের ইচ্ছায়
বনবাস এ যান .। আর এর পর উপায়ন্তর না দেখে মহামহিম ভীষ্ম ধৃতরাষ্ট্র
কে সিংহাসন এ বসান। পান্ডু র ভাগ্যে ছিল সারাজীবন সন্তানহীন
হয়ে থাকার শাপ .
Impotent পান্ডু সন্তান
হবে না জানার পর কুন্তী পান্ডু
কে ঋষি দুর্বাশা দেওয়া বরদান এর কথা বলেন। এতে পান্ডু
খুশি হয়ে তাকে মন্ত্রবলে সন্তান এর কামনা করার Request করেন। ( সেই সময় কোনো
পুরুষ যদি সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হতেন তাহলে নিয়োগ প্রথার প্রচলন
ছিল) . দুর্বাশা র দেয়া মন্ত্র ব্যবহার করে কুন্তী ধৰ্মদেব , পবনদেব , ইন্দ্র
দেব এর কাছ থেকে তিন পুত্র যথাক্রমে যুধিষ্ঠির , ভীম ,অর্জুন লাভ করেন এবং কুন্তী
র সহযোগিতায় মাদ্রী অশ্বিনী কুমার দ্বয় এর থেকে নকুল ও সহদেব কে
লাভ করেন। এদিকে হস্তিনাপুর এর দৃশ্য তখন অন্য। গান্ধারী এবং কুন্তী প্রায় একই সময়
conceive করেছিলেন। কিন্তু যুধিষ্ঠির এর জন্ম হয়ে যাবার পর ও গান্ধারী
তখন ও প্রসব করতে সক্ষম হননি । তার গর্ভাবস্থা দীর্ঘ হতে
থাকে। এতে গান্ধারী রেগে গিয়ে নিজের গর্ভে আঘাত করেন । যার ফলে
তিনি একটি মাংসপিন্ড প্রসব করেন। বেদব্যাস সেই মাংসপিন্ড কে ১০১ টি
টুকরো করে কলসের মধ্যে রেখে দেন। এর থেকে গান্ধারী র একশত
পুত্র ও এক কন্যা র জন্ম হয়। প্রথম যেই কলসে প্রাণ এর সৃষ্টি হয়েছিল তিনি
মহাভারত এর খল চরিত্র দুর্যোধন। কথিত আছে দুর্যোধন এর জন্মের সময়
প্রকৃতি তে নানা রকম অশুভ লক্ষণ দেখা গিয়েছিলো। যেমন বিনা কারণ এ
বজ্রপাত হয়েছিল , নানা প্রকার বন্য পশুপাখীর চিৎকার ইত্যাদি। নবজাতক এর
মধ্যে অশুভ লক্ষণ দেখে কৃপাচার্য , বিদুর সহ আরো অনেকেই ধৃতরাষ্ট্রকে এই সন্তান কে মেরে ফেলার অনুরোধ
করেছিলেন।কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র তা করেন নি। আমার মনে হয় কোনো পিতার
পক্ষেই এই কাজ করা সম্ভব নয়।
দুর্যোধন আর ভীম দুজনে এক
ই দিন এ জন্মেছিলেন। ভীম জন্মান দিনের বেলা আর দুর্যোধন রাতে। সুতরাং তারা
ছিলেন সমবয়সী। মহাভারত এ আমরা পাই দুর্যোধনের শরীর এর ওপর অংশ স্বয়ং মহাদেব নিজে
বজ্র দিয়ে তৈরী করেছিলেন। আর শরীরের নিচের অংশ তৈরী করেছিলেন মহাদেব এর
স্ত্রী ফুল দিয়ে । এর জন্য দুর্যোধন এর শরীর এর ওপর এর অংশ ছিল সুঠাম
, শক্ত, সবল কিন্তু নিম্নাংশ ছিল দুর্বল ( অসীম শক্তিশালী হয়েও
পরবর্তীতে যা তার মৃত্যুর কারন হয়েছিল ) । হস্তিনাপুরে এই
দুর্যোধন তার ছোট ভাইদের ও বোন এর সাথে পিতা মাতার স্নেহে
বড় হয়ে উঠতে লাগলেন। এদিকে বনবাসে পান্ডু র মৃত্যু হলে মাদ্রী
তার সাথে সহমরণে যায় এবং কুন্তী ৫ পুত্র কে নিয়ে হস্তিনাপুর এ ফেরত আসেন। সমস্যার শুরু এখান থেকে। রাজা র জ্যেষ্ঠ পুত্রই হবেন যুবরাজ আর ভবিষ্যত এর সম্রাট এই কথা দুর্যোধন ছোট থেকেই জেনে বড় হয়েছেন । এই সময় দুর্যোধন এবং ভীম এর বয়স ১৫ আর যুধিষ্ঠির এর বয়স ১৬। সেখানে one fine morning তিনি জানতে পারেন যে যুধিষ্ঠির হবেন যুবরাজ আর ভবিষ্যৎ এর সম্রাট । দুর্যোধন এর পক্ষে হাসিমুখে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না, যেখানে পান্ডব রা কেউ পান্ডু র ঔরস জাত সন্তান ছিল না। তাহলে পান্ডবরা কেউ ই কুরু বংশের সন্তান ছিলেন না। কিন্তু এই সত্যি টা জেনেও আমরা কি expect করতে পারি , তিনি তার রাজমুকুট টা হাসি মুখে তুলে দিলে ভালো করতেন যুধিষ্ঠির এর হাতে। কেন ? আমি আপনি থাকলে করতাম ? the answer is a big NO .....
দুর্যোধন এই সময় পুত্রস্নেহে থাকা
পিতা র ও সমর্থন পুরোপুরি পান নি। আর মহামহিম ভীষ্ম র তো নয়
ই।
এই
সময়
তার
হাত
ধরেন
তার
মামা
শকুনি।
কারন
গান্ধার রাজ শকুনির ও হস্তিনাপুর এর
সাথে পুরোনো কিছু হিসাব মেটানোর ছিল ।
ভাগ্নে
দুর্যোধন কে
অবলম্বন করে
তিনি
নিজের
কার্য
সিদ্ধি
করতে
সক্ষম
হয়েছিলেন। হস্তিনাপুর আর
কুরু
বংশ
কে
ধ্বংস
করার। (https://historywithmythology.blogspot.com/2020/04/was-shakuni-villain-in-mahabharata_30.html)
ঠিক
এই
সময়
টায়
কিশোর
দুর্যোধন মাথা
টা বেশ ভালো মতোই খেয়েছিলেন
শকুনি। ভীম কে
বিষ
দেওয়া
, পুড়িয়ে
মারার
চেষ্টা
সব
ই
শকুনি
র
বুদ্ধি
তে দুর্যোধন করেছিলেন । দিনের
পর
দিন
পান্ডব
দের বিরুদ্ধে দুর্যোধন এর মন
বিষিয়ে
তুলেছিলেন শকুনি। পাশা
খেলারও মাথা ছিল শকুনির । যা
থেকে
পরবর্তী তে
দ্রৌপদী এর বস্ত্রহরন থেকে পান্ডব দের
বনবাস
এবং
সর্বশেষে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ।
কিন্তু
শকুনি
হয়তো কিশোর দুর্যোধন এর
ওপর
পুরোপুরি CONTROL টা পেতেন না
, যদি
সেই
সময়
দুর্যোধন পিতা
ধৃতরাষ্ট্র ,এবং ভীষ্ম
ও
বিদুর
এর
থেকে
মানসিক
support টা
পেতেন।
এমনকি
তার
মা
গান্ধারীর কাছেও
সেই
সমর্থন
তিনি
পান
নি।
এটা
কি তার সাথে উচিত কাজ হয়েছিল ? পাঠক গণ কি বলেন
? আমার মতে পান্ডব দের জন্ম বৃত্তান্ত জানার পর দুর্যোধন এর
পক্ষে খুব সহজ ভাবে এসব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। বর্তমান যুগেও এরকম ঘটনা কারো সাথে ঘটলে তার পক্ষে সব কিছু মেনে
নেওয়া সম্ভব কি ?
দুর্যোধন
এর মধ্যে কি ভালো কোনো
গুণ ই ছিল না
? সব টাই কি খারাপ ছিল
? যেভাবে তাকে মহাভারতে বর্ণনা করা হয়েছে। আমার কিন্তু তা মনে হয়
না। দুর্যোধনের চরিত্রের অনেক ভালো দিক ছিল যা নিয়ে খুব
বেশি আলোচনা হয় নি। এবার আমি
এই খল দুর্যোধন এর
কিছু ভালো দিক লেখার চেষ্টা করছি
১.
দুর্যোধন Caste System এ বিশ্বাস করতেন
না।
সুতপুত্র কর্ণ ছিলেন তার
সব
চেয়ে
প্রিয়
বন্ধু।
পাঠক
এর
মধ্যে
দুরভিসন্ধি দেখতেই
পারেন।
কিন্তু
দুর্যোধন রাজা
র
ছেলে
হয়েও
সারথি
পুত্র
কে
অঙ্গরাজ বানান।
শুধু
তাই
নয়
কর্ণ
কে
তিনি
সব
চেয়ে
প্রিয়
বন্ধু
র
স্থান
ও
দিয়েছিলেন। যেখানে
অর্জুন
তথা
পান্ডব
রা
সুতপুত্র বলে
কর্ণ
কে
অপমান
করেছিলেন। কর্ণ
র
বীরত্ব
দেখে
দুর্যোধন একবার
বলেছিলেন হতে
পারে
সুতপুত্র কিন্তু
ধন্য
সেই
মা
যে
তোমাকে
জন্ম
দিয়েছিলেন।
২.
দুর্যোধন সেই
সময়
এর
মতো
বহুগামী ছিলেন
না।
কৌরব
পান্ডব
দুই
পক্ষেই
সেই
সময়
বহুগামিতাই খুব ই
সাধারণ
ঘটনা।
সেখানে
তিনি
শুধু
ভানুমতি কেই
বিয়ে
করেছিলেন।
৩.তিনি সেই সময়
এর
একজন
সেরা
যোদ্ধা। হয়তো সেই
সময়
এর
সেরা
গদা
যোদ্ধা
ছিলেন
দুর্যোধন।ভীম হয়তো
কখনোই
ন্যায্য যুদ্ধে দুর্যোধন কে হারাতে
পারতেন
না।
৪.
এতো
কিছুর
পর
ও
দুর্যোধন স্বর্গ লাভ
কোরেছিলেন।
এই
নিয়ে
একটা
ঘটনা
পরবর্তী তে
জানা
যায়।
রাজত্ব
শেষ
হবার
পর
যখন
পান্ডব
রা
হিমালয়
এ
প্রস্থান করেন
তখন
এক
এক
করে
সবাই
মারা
যাবার
পর
যুধিষ্ঠির জীবিত
স্বর্গে পৌঁছান। তিনি
দেখেন
যে
সেখানে
দুর্যোধন বসে
আছেন।
পরবর্তী তে
দ্রৌপদী সহ সব
ভাই
রা
নরক
ভোগ
করে
স্বর্গে আসার
পর
দুর্যোধন কে স্বর্গে দেখে
ভীম
অবাক
যান।
তিনি
জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা যুধিষ্ঠির কে
জিজ্ঞেস করেন
, এতো
খারাপ
কাজ
এর
পর
ও
দুর্যোধন স্বর্গে ? তাহলে
ভগবান
এর
ও
ভুল
হয়
হয়ত!
যুধিষ্ঠির উত্তর
দেন
দুর্যোধন নিজ কর্মেই
স্বর্গ
লাভ
করেছেন। তিনি
আজন্ম
একটাই
জিনিস
চেয়েছেন। সিংহাসন। কোনো বাধা
র
সামনেই
তিনি
পিছিয়ে
আসেন
নি।
তার
লক্ষ্য
ছিল
অভীষ্ট। যার জন্য
তিনি
ক্ষত্রিয় দের
মতো
প্রাণ
দিয়েছিলেন কুরুক্ষেত্রে। সিংহাসন না
পেলেও
তিনি
স্বর্গ
লাভ
করেছিলেন এই
ভাবে।
দুর্যোধন এর ভুল
:
১. আমার চোখে
দুর্যোধন এর
সব
চেয়ে
বড়
ভুল
ছিল
নারায়ণ
নাকি
নারায়ণী সেনা
choice করার
সময়।
শ্রীকৃষ্ণ অস্ত্র
না
ধরলেও
কি
করতে
পারেন
তা
আমরা
মহাভারত এর
যুদ্ধে
দেখেছি
বা
শুনেছি।
২.দ্বিতীয় ভুল।
কুরুক্ষেত্রে র
যুদ্ধে
তিনি
সেনাপতি নিয়োগ
এ
সব
চেয়ে
বড়
ভুল
টা
করেছিলেন।প্রায় প্রথম
১০
দিন
ভীষ্ম
,তারপর
দ্রোণাচার্য সব শেষে
কর্ণ।
কিন্তু
তার
কাছে
এমন
একজন
ছিলেন
যাকে
তিনি
সেনাপতি একদম
শেষে
সব
কিছু
শেষ
হবার
সময়
বানালেন। তিনি হলেন
অশ্বত্থামা। যিনি ছিলেন
স্বয়ং
শিব
এর
বরপুত্র। অশ্বত্থামা নিজের
পিতা
দ্রোণাচার্য র
থেকেই
শুধু
নয়
, স্বয়ং
ভীষ্ম
, কৃপাচার্য এদের কাছেও
অস্ত্র
শিক্ষা
নিয়েছিলেন। আর তার
ওপর
তিনি
ছিলেন
চিরঞ্জীবী। যিনি স্বয়ং
মহাদেব
এর
বরপুত্র ছিলেন
তাকে
হারানোর ক্ষমতা
পান্ডব
দের
ছিল
কিনা
সেটার
প্রশ্ন
থেকে
যায়। কিন্তু অশ্বত্থামা যখন
দায়িত্ব পেলেন
তখন
কুরুক্ষেত্র র
যুদ্ধ
শেষ।
আমার
চোখে
কিন্তু
দুর্যোধন অনেক
বেশি
Human .. পান্ডব
দের
মতো
ভগবানত্ব দেখান নি।
অন্তত
জুয়া
খেলা
তে
স্ত্রী
, ভাই
দের
বাজি
রাখেন
নি।
আর
ক্ষত্রীয় দের মতো মৃত্যুবরণ করেছিলেন।শ্রীকৃষ্ণ এর সাহায্য পান্ডব
দের
পক্ষে
না
থাকলে
যুদ্ধের ফল
অন্য
রকম
হতো।
আর
যুধিষ্ঠির না
মুকুট
উঠতো
দুর্যোধন এর
মাথায়।
অভিমন্যু বধ এর উত্তর
হিসেবে
ভীষ্ম
,দ্রোণাচার্য , কর্ণ
এবং
দুর্যোধন নিজে
পান্ডব
দের
Unfair and Cowardly আক্রমণ
এ
মারা
গেলেন।
আর এই
সব
কিছু
হলো
শুধু
মাত্র
ধর্ম
স্থাপন
এর
জন্য।
Reference : internet
copyright : Pinaki Ghosh
excellent
উত্তরমুছুনএতটা কখনো ভেবে দেখিনি,সত্যি অসাধারন
উত্তরমুছুন