Nepotism Is as old as Mahabharata !! মহাভারতও "Nepotism" দোষে দুষ্ট ( Mahabharata Stories )


Nepotism এই শব্দটি কয়েকদিন যাবত সংবাদপত্র,টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে খুব শোনা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া সিনেমা জগতের প্রতিভাবান তারকা     Sushant Singh Rajput এর মৃত্যুকে ঘিরে    Nepotism   কথাটি বার বার উঠে এসেছে। এই প্রতিভাসম্পন্ন জনপ্রিয় তারকার অকাল মৃত্যুকে ঘিরে  অনেকের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে।। সিনেমা জগতের একাধিক  তাবড়-তাবড় লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে    Nepotism   এর দোষে দুষ্ট হওয়ার।

এখন প্রশ্ন হলো এই   Nepotism  কি?

Nepotism এই ইংরাজি শব্দটির বাংলা মানে করলে হয় স্বজনপোষন। সমাজে প্রচলিত যে কোনো পেশায় যেমন অফিসের চাকরি হোক বা গান বাজনার জগৎ, সিনামা জগৎ হোক বা খেলাধুলার জগৎ সব জায়গাতেই শুধু প্রতিভা থাকলেই নিজের যোগ্যতা প্রমান করা যায় না, তারজন্য চাই একজন   Godfather । এই ব্যাক্তিটি যদি ক্ষমতাশালী হয় এবং আপনি তার স্নেহভাজন হতে পারেন তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তবে স্নেহভাজন হতে গেলে অবশ্যই পয়সাওয়ালা খানদানের হতে হবে অথবা ঠিক জায়গায় "তৈলমর্দন" করাটা জানিতে হবে। তবেই নেকনজরে পরার সুযোগ হবে। আর তা না হলে যতই প্রতিভা থাকুক কিসসু করতে পারবেন না।  পক্ষপাতিত্বও ছাড়া আর কি বলা যায়। আমাদের সমাজ এই পক্ষপাতিত্বের দোষে দুষ্ট। 
কিন্তু এই Nepotism বা স্বজনপোষণ কি শুধু বর্তমান যুগেই ঘটে? উত্তরে বলবো "না", অতি প্রাচীন যুগেও এই শব্দটির অস্তিত্ব ছিলো। হয়তো সেই ভাবে ভাবাই হয়নি বা বলা ভালো ভাবতে দেওয়া হয় নি।  "ধামাচাপা" ব্যাপারটা প্রাচীনকাল থেকে আজকের বর্তমান কাল পর্যন্ত একই পদ্ধতিতে চলে আসছে। জাত, বর্ন ভেদ প্রথা সেই অতীত থেকে আজও সমাজে বিদ্যমান। মানুষের অনেক উন্নতি হয়েছে, চিন্তাভাবনা - সভ্যতা - সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে কিন্তু ভেদাভেদ প্রথার জাল থেকে মুক্ত হতে পারেনি, পারবে বলে মনে হয় না।
যাই হোক, প্রাচীনকালে
Nepotism বা স্বজনপোষণের যে  অস্তিত্ব ছিলো সেটা মোটেই ভুল না।
একলব্যকে ভুলে গেলেন?

মহাভারত যারা পড়েছেন তাদের কাছে একলব্য নামটি অপরিচিত নয়। মহাভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র একলব্যকে আমরা মনে রেখেছি তাঁর গুরুদক্ষিণা দেওয়ার জন্য। দ্রোনাচার্যের কথায় নিজের ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ( বুড়ো আঙুল) কেটে গুরুদক্ষিণা দিয়েছিলেন একলব্য। কিন্তু কেনো এমন গুরুদক্ষিণা চেয়েছিলেন দ্রোনাচার্য? তিনি তাঁর অন্য কোনো শিষ্যের কাছে এই ধরনের গুরুদক্ষিণা চেয়েছিলেন বলে তো জানা যায় না!! তাহলে একলব্যের কাছে এমন অদ্ভুত দাবীর কারন কি ছিলো?
আজ মহাভারতের এই চরিত্র সম্পর্কে বলবো ----
একলব্যের কথা বলার আগে দ্রোনাচার্য সম্পর্কে কিছু কথা বলা প্রয়োজন।








ঋষি ভরদ্বাজের পুত্র ছিলেন দ্রোন। শৈশবে দ্রোনের সহপাঠী বা বন্ধু ছিলেন পাঞ্চাল রাজ্যের রাজপুত্র দ্রুপদ।ব্রাহ্মণ সন্তান দ্রোন যাগযজ্ঞ, পুজার নিয়মনীতি ছেড়ে অস্ত্রবিদ্যা শিখলেন অগ্নিবেশ্যর কাছে এবং  পরে পরশুরামের কাছে। পরশুরাম দ্রোনকে কিছু অস্ত্র প্রদান করেছিলেন। যার ফলে দ্রোন অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেছিলেন। অস্ত্রবিদ্যার আচার্য দ্রোন দ্রোনাচার্য হলেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ হয়ে অস্ত্রচালনা চর্চা করায় সমাজে তাঁর কিছু সমস্যা তৈরী হয়। কারন যুদ্ধ ক্ষত্রিয়দের কাজ। ব্রাহ্মণরা পুজা, যাগজজ্ঞ নিয়ে থাকবে। সমাজের বর্নপ্রথায় কে কোন কাজ করবে সেটা সম্প্রদায় দিয়ে নির্ধারণ করা হতো। ব্রাহ্মণ সন্তান হয়ে অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী দ্রোনকে ব্রাহ্মণ সমাজ ব্রাত্য করে দেয়। এর ফলে সহায় সম্বলহীন হয়ে দ্রোনাচার্যকে অভাব দারিদ্র্যতার সম্মুখীন হতে হলো। একমাত্র পুত্র অশ্বথামার দুধের যোগাড় করতেও তিনি অক্ষম। এই কঠিন সময়ে তাঁর বাল্যবন্ধু দ্রুপদের কথা মনে আসে। দ্রুপদ তখন পাঞ্চালের রাজা। ছোটোবেলার বন্ধুর কাছে সাহায্যের আশায় পাঞ্চাল রাজ্যে আসেন দ্রোনাচার্য।  কিন্তু কথায় বলে, অসম বন্ধুত্ব মধুর হয়না। রাজা দ্রুপদ দ্রোনাচার্যকে বন্ধু বলে স্বীকৃতি দিলেন না। তিনি রাজা, দ্রোনের মতো শ্রীহীন দরিদ্র তার বন্ধু হতে পারেনা। ছোটোবেলার বন্ধুত্ব খেলার ও লেখাপড়ার স্বার্থের জন্য। আজ সেই বন্ধুত্ব নেই। শুধু তাই নয় নানা কটু কথায় দ্রোনাচার্যকে অপমানিত করলেন।মানুষের অংহকারই শত্রুতার বীজ বপন করে, সেই বীজই একদিন ধ্বংসের বৃক্ষ রূপে জন্ম নেয় প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। এহেন অপমানে দ্রোনের মনের মধ্যে সেই বীজ পুঁতে দিয়েছিলেন দ্রুপদ। দ্রোনাচার্য প্রতিজ্ঞা করলেন এই অপমানের বদলা তিনি একদিন ঠিক নেবেন। একে অভাব দারিদ্র্যতা তার ওপর এই অপমান, ক্রোধে আগুন জ্বলতে থাকে দ্রোনাচার্যের মনে। এই দিশাহারা অবস্থায় ভীষ্ম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন দ্রোনাচার্যকে।
পাঞ্চাল ও কুরু রাজ্য সেই সময়কার বড় রাজ্য ছিলো। পাশাপাশি দুটি প্রতিবেশী রাজ্য যারা শক্তিতে কেউ কারো থেকে কম নয়। এই দুই রাজ্যের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো না, সংঘর্ষ ছিলো। কুরু রাজ্যের রাজা অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র হলেও ভীষ্মই ছিলেন প্রকৃত অর্থে প্রধান। পাঞ্চাল রাজ দ্রুপদের কাছে অপমানিত হওয়ার সংবাদ কানে যেতেই কূটনৈতিক জ্ঞানে অভিজ্ঞ ভীষ্ম "শত্রুর শত্রু মিত্র" দ্রোনাচার্যকে হস্তিনাপুরে নিয়ে আসেন এবং কুরু রাজকুমারদের ( কৌরব ও পাণ্ডবগন ) অস্ত্রগুরু পদে নিয়োগ করেন। দূরদর্শী ভীষ্ম বুঝেছিলেন পাঞ্চাল রাজ্যেকে দমন করতে হলে দ্রোনাচার্যের মতো একজন প্রয়োজন এবং যার তত্ত্বাবধানে থাকলে রাজকুমারা অস্ত্রশিক্ষায় পারদর্শীতা লাভ করবে। দ্রোনাচার্য নিজের স্বার্থেই যথাযোগ্য শিক্ষা দিতে কার্পণ্য করবেন না। কুরু রাজকুমারদের অস্ত্রগুরু নিযুক্ত হওয়ার পরে দ্রোনাচার্যের আর্থিক উন্নতি হয় এবং তাঁর সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভীষ্মের এই উপকারের প্রতিদান দ্রোনাচার্য দিয়েছিলেন। রাজপুত্রদের অস্ত্রশিক্ষা দিতে গিয়ে তিনি অর্জুনের প্রতিভা বুঝতে পারেন।এই রাজপুত্র অর্জুনকে ঠিকমতো অস্ত্রশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে তার এবং ভীষ্মের পাঞ্চাল রাজ্যের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার মনোবাসনা পূর্ণ হবে সেটা বুঝতে পেরেছিলেন দ্রোন। তাই গুরু অগ্নিবেশ্য ও পরশুরামের থেকে শেখা সমস্ত বিদ্যা উজার করে অর্জুনকে তৈরী করেন তিনি। অর্জুনও সেই সব বিদ্যা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে গ্রহন করেছিলো।





ঠিক সেই সময়, প্রকৃত প্রতিভা সম্পন্ন এক শিক্ষার্থী দ্রোনাচার্যের কাছে এসেছিলো অস্ত্র শিক্ষার তালিম নিতে। তিনি ছিলেন একলব্য।দ্রোনাচার্য একলব্যকে অস্ত্রশিক্ষা দিতে অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু কেনো?
কি ত্রুটি ছিলো একলব্যের?
এবার জানবো সেই একলব্যের কথা ----

একলব্য ছিলেন নিষাদরাজ হিরণ্য ধনু ও রানী বিশাখার পুত্র। কোনো কোনো পৌরাণিক সূত্রানুযায়ী, একলব্য ছিলো হিরণ্য ধনুর পালিত পুত্র। নিষাদরা ছিলো ভারত উপমহাদেশের আদিবাসী গোষ্ঠী। বনে জঙ্গলে ঘুরে শিকার করা ছিলো এদের জীবনযাত্রা। এরা ছিলো ব্যাধ।  সুসভ্য আর্যরা আসার আগে থেকেই  নিষাদ জনগোষ্ঠী বসবাস করতো ভারতে।  একলব্য এই নিষাদ গোষ্ঠীর মানুষ। ধনুকে তার নিশানা ছিলো অব্যর্থ। সে চাইতো বড় বীর হিসাবে জগতে তার নাম হোক। ব্যাধ হয়ে জীবন কাটাতে ইচ্ছুক না সে।  কিন্তু সেরা বীর হতে গেলে সঠিক তত্ত্বাবধানে অস্ত্র শিক্ষার তালিম নিতে হবে। চারিদিকে তখন  গুরু দ্রোনাচার্যের নাম। মনে মনে দ্রোনাচার্যকে গুরু জ্ঞানে মেনে নিয়েছিলো। বাস্তবে তাঁর শিষ্য হতে পারলে স্বপ্ন সফল হতে পারে একলব্যর। তাই দ্রোনাচার্যকে গুরু হিসাবে পাওয়ার আশায় কুরু রাজ্যের রাজধানী হস্তিনাপুরের উদ্দেশ্য যাত্রা করে একলব্য।
দ্রোনাচার্যের আশ্রমে পৌঁছে, তাঁর কাছে নিজের ইচ্ছার কথা জানায় একলব্য। গুরুর সামনে নিজের কিছু প্রতিভার নমুনা প্রদর্শন করে এবং তা দেখে দ্রোনাচার্যের বুঝতে অসুবিধা হয়না একে শিষ্য হিসাবে তালিম দিলে তাঁর প্রিয় শিষ্য অর্জুনের প্রতিভা খর্ব হবে। একলব্য ছাড়িয়ে যাবে অর্জুনকেও। তাছাড়া কুরু বংশের রাজপুত্রদের অস্ত্রগুরু দ্রোনের কুরু বংশ বহিঃর্ভুত কাউকে শিক্ষা দেওয়ার অনুমতি ছিলো না, যদি সে রাজবংশভুত কেউ না হয়।কারন অন্যান্য রাজ্যের রাজপুত্রদের অস্ত্র শিক্ষা দ্রোনাচার্য   দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়, যেমন বৃষ্ণি,অন্ধক রাজ্য প্রভৃতি।
দ্রোনাচার্য একলব্যকে অস্ত্র শিক্ষা দিতে অস্বীকার করে ফিরিয়ে দেন।
কি ছিলো একলব্যের ত্রুটি? সে অনার্য আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষ ছিলেন তাই রাজপুত্রদের সাথে তালিম নিতে পারবে না? কিন্তু এখানে একটা কথা বলা জরুরি, একলব্য শুধু অনার্য ছিলো বলেই গুরু দ্রোন তাকে শিষ্য করতে চাননি এটা কতটা সত্যি সে বিষয়ে সন্দেহ থেকে যায়। কারন এই ঘটনা সেই সময়ের যখন আর্য অনার্যদের ভেদাভেদ অনেকটা কমে এসেছিলো। তাদের মধ্যে বিবাহের ঘটনারও উল্লেখ আছে, যেমন কুরু রাজ শান্তনুর স্ত্রী সত্যবতী ছিলেন অনার্য কন্যা ( ধীবর জাতির কন্যা )। এমন কি শ্রীকৃষ্ণ নিজেও ছিলেন অনার্য যাদব বংশের। এছাড়াও অনার্যদের মধ্যে এমন অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছিলেন যার উদাহরণ মহাভারতে আছে।
তাহলে দ্রোনের অন্য কি কারন ছিলো একলব্যকে ফিরিয়ে দেওয়ার?
আসল কারন ছিলো অন্য....
নিষাদরা ছিলো রাজা জড়সন্ধের মিত্রশক্তি। এদিকে জড়সন্ধ ছিলো কুরুরাজ্যের শত্রু। সেই দিকটা চিন্তা করে নিষাদপুত্র একলব্যকে অস্ত্রশিক্ষায় পারদর্শী করে তোলার মানে পক্ষান্তরে কুরু রাজ্যের বিরোধী পক্ষকেই সাহায্য করা হয়। ভীষ্মের পরম অনুগত দ্রোনাচার্য সেই ঝুঁকিটা নিতে চাননি। আসলে দ্রোনাচার্য শক্তিশালী রাজবংশের সর্বময় ব্যাক্তি ভীষ্মের নেকনজরে থাকাটা বেশী দরকারী বলেই মনে করেছিলেন। দ্রোন নিজে বড় গুরু একথা ঠিক কিন্তু যে রাজপরিবারের সাহায্যের জন্য আজ তিনি রাজ অস্ত্রগুরু, এত নাম, যশ সেখানে একজন নিষাদপুত্রকে শিক্ষা দিতে গিয়ে নিজের গোছানো জায়গাটি নষ্ট করতে চায়নি। এছাড়া সবচেয়ে বড় কারনটা  হলো অর্জুন।নিজের হাতে গড়া প্রিয় শিষ্য অর্জুনের সমকক্ষ এমন কেউ হতেই পারে না যে কিনা বংশ পরিচয়ে ব্যাধের সন্তান। তাই  যথেষ্ট প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও একলব্যকে সরিয়ে দেওয়াটাই ঠিক মনে করেছিলেন দ্রোন। কোথাকার কে এক ব্যাধের পুত্র সে কি না অস্ত্র বিদ্যা শিখবে রাজকুমাদের সাথে? অর্জুনকে ছাপিয়ে যাবে? অসম্ভব, হাঠাও এই একলব্যকে...
যাকে মনে মনে গুরু মেনে নিয়েছিলো, সেই গুরুর এই আচরণে মর্মাহত হয় একলব্য।সে কেনো যুদ্ধবিদ্যার সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জনের অধিকার পাবে না? 








খুবই দুঃখিত হয়ে পরে একলব্য কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়না। দ্রোনকে গুরু হিসাবে না পাওয়ার ব্যার্থতা নিয়ে গৃহে ফিরে না গিয়ে হস্তিনাপুরের কাছেই এক গভীর নির্জন অরন্যে দ্রোনের এক মাটির মূর্তি তৈরী করে গুরুজ্ঞানে তার সামনে একাগ্রচিত্তে প্রকৃত অধ্যাবসায়ের সাথে নতুন উদ্যমে অস্ত্র বিদ্যা চর্চা শুরু করে।
এই ঘটনার কিছু কাল পরে, কুরু রাজপুত্রেরা শিকারে যায়। তাদের সাথে থাকা এক শিকারী কুকুর হরিণের পেছনে তারা করে গভীর অরন্যের ভেতর একলব্যকে দেখে চিৎকার শুরু করে। বিরক্ত হয়ে একলব্য সাতটি তীর এমনভাবে কুকুরটির মুখে নিক্ষেপ করে যাতে একবিন্দু রক্ত কুকুরটির মুখ থেকে পরে না, আহত হয় না, কিন্তু ডাকাটা শুধু বন্ধ হয়ে যায়। ওই অবস্থায় কুকুরটি রাজপুত্রদের কাছে ফিরে এলে তারা হতবাক হয়ে যায়, এমন নিখুঁতভাবে বাণ কে মারলো? একাজ কোনো সাধারণ অস্ত্রচালকের নয়। খোঁজ করে তারা একলব্যের সামনে এসে পৌঁছায় এবং  তার কাছে পরিচয় ও এই বিদ্যা সে কোথায় শিখেছে জানতে চায়। একলব্য নিজের পরিচয় দিয়ে জানায় সে গুরু দ্রোনাচার্যের শিষ্য।
একে রাজপরিবারের কেউনা,তার ওপর একজন শূদ্রের এত দক্ষতা দেখে দ্রোনের সেরা শিষ্য অর্জুন ঈর্ষায়,ক্রোধে জর্জরিত হয়ে সোজা দ্রোনাচার্যের কাছে গিয়ে সব ঘটনা জানিয়ে বলে, "গুরুদেব আপনি কথা দিয়েছিলেন আপনার সমস্ত বিদ্যা আমাকে দান করবেন, আপনার অন্য কোনো শিষ্য আমাকে অতিক্রম করতে পারবে না, তাহলে কে এই একলব্য? তাকে এই অদ্ভুত কৌশল শিখিয়েছেন, আমাকে কেনো শেখাননি? " সম্পুর্ন ঘটনা শুনে দ্রোনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার দশা। তিনি তো একলব্যকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তারপরেও সে নিজেকে দ্রোনের শিষ্য বলে দাবী করে কোন অধিকারে!  আর তীর নিক্ষেপের এই অদ্ভুত কৌশল দ্রোনাচার্য স্বয়ং নিজেও জানেন না, অর্জুনকে কি শেখাবে! কিন্তু সে কথা শিষ্য অর্জুনকে বলেন না। তিনি অর্জুনকে সঙ্গে নিয়ে একলব্যের কাছে আসেন। তিনি দেখেন তাঁর মূর্তির সামনে একলব্য একমনে অস্ত্রচর্চা করে যাচ্ছে। কৌশলের নমুনা দেখে দ্রোনাচার্যের চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। এই বিদ্যা যে সবটা তারও জানা নেই। কোথায় শিখলো ছেলেটা এইসব অস্ত্র কৌশল ? কতটা নিষ্ঠা কতটা একাগ্রতা থাকলে গুরু ছাড়া গুরুর মূর্তিকে সামনে রেখে এমন কৌশল রপ্ত করা যায়!! জন্মগত প্রতিভা ছাড়া এ অসম্ভব। একজন ব্যাধের পুত্র,যে নিজের যোগ্যতাকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছে দেখে দ্রোনাচার্য মুগ্ধ হলেও মুখে সে কথা বলতে পারলেন না, নিজের মনের সংকীর্ণতা থেকে বের হতে পারলেন দ্রোন। কিন্তু এই প্রতিভাকে এখানেই শেষ না করলে যে তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দায়ে পরবেন। যে একলব্যকে শিষ্য মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলেন সেই একলব্যকে নিজের চেষ্টায় এমন কৌশলে পারদর্শী হতে দেখে নিজের নিরাপদ আসনটি টলে যাওয়ার আভাস পেয়েছিলেন কি দ্রোনাচার্য? কারন অর্জুনকেও তিনি এই মাপের অস্ত্র শিক্ষা দিতে পারেননি। অর্জুন ছাড়া আর কেউ এতবড় যোদ্ধা হতেই পারে না, এই চিন্তাধারা থেকেই দ্রোনাচার্য একলব্যর কাছে গুরুদক্ষিণার নামে জঘন্য এক দাবী রেখেছিলেন।
দ্রোনাচার্য বলেন, "আমি বা আমার মূর্তি সে একই, সেই দিক থেকে বিচার করলে আমিই তোমার গুরু,তাই আজ আমি আমার গুরুদক্ষিণা চাইছি"।গুরুদক্ষিণা চাওয়ার প্রথা শিক্ষা সমাপ্ত হলে। গুরু দ্রোন দক্ষিণা চাইছেন তার মানে তিনি একলব্যকে তাঁর  শিষ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এতদিন যাঁকে দেবতাজ্ঞানে সন্মান করে আসছেন সেই গুরুকে গুরুদক্ষিণা দিয়ে শিষ্যত্ব পাবে সেই আশায় একলব্য বলেন,  "এ আমার পরম সৌভাগ্য গুরুদেব, কি দক্ষিণা চাই আজ্ঞা করুন।"
অম্লান বদনে দ্রোনাচার্য বলেন, "তোমার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি।"
দ্রোনাচার্যের এই কথায় অর্জুন পর্যন্ত চমকে ওঠে কিন্তু প্রতিজ্ঞাবদ্ধ শিষ্য একলব্য গুরুর ছলনা শেষ মূহুর্তে বুঝতে পারলেও  নিজের কথা রাখেন।বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে তীরন্দাজের একান্ত প্রয়োজনীয় ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি নিজে হাতে কেটে গুরু (!!) দ্রোনাচার্যের পায়ের কাছে রাখে।নিষ্ঠুর দ্রোনাচার্য নিজের অভিষ্টে সফল হলেন কি না যাচাই করার জন্য একলব্যকে তীর নিক্ষেপ করতে বলেন, কিন্তু একলব্যের একটা তীরও আগের মতো অব্যর্থ হলো না,লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো। নিজের উদ্দেশ্য পুরন হতে দেখে খুশি হয়ে দ্রোনাচার্য অর্জুনকে নিয়ে ফিরে গেলো।







কি মনে হয় মহাভারতের এই অধ্যায় পড়ে,একলব্যর সাথে যা হয়েছিল সেটা Nepotism ছিলো না?
যদি ধরেই নেওয়া হয় সেই ঘটনার সময় আর্য অনার্য ভেদাভেদ খুব একটা ছিলো না, তবুও এই কথা মানতেই হবে রাজার - রাজপুত্র বা রাজপরিবারের সাথে সাধারণ মানুষের বিরাট একটা তফাত ছিলো।ক্ষত্রিয় রাজ-রাজাগনের থেকে কোনো সাধারণ মানুষের যারা প্রজা বা ভৃত্য শ্রেনীর তাদের যোগ্যতা প্রতিভা বেশী থাকলেও নিজেদের প্রমান করার অধিকার ছিলো না। তা না হলে একলব্য বঞ্চিত হয়েছিলো কেনো?
অর্জুনের বীরত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, সে বীর। কিন্তু বীরের বীরত্ব সমান প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে লড়াই করে জেতার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায়।অর্জুনতো সত্যিই বীর ছিলেন, তাহলে কেনো একলব্যের প্রতিভা দ্রোনাচার্য ও অর্জুনকে এতটাই ভাবিয়ে তুলেছিল যে তাকে সরিয়ে দিতে হয়েছিলো? তার মানে কি একলব্যের প্রতিভা অর্জুনের থেকে অনেক বেশী ছিলো? দুঃখের বিষয় সে খবর জানার কোনো উপায় রাখা হয়নি।
একলব্য যদি রাজ কুলজাত উচ্চমানের ক্ষত্রিয় হতো তাহলে কি তার সাথে এই ধরনের আচরণ করা হতো?
যদি একলব্যের একজন   Godfather থাকতো তাহলে হয়তো তার বড় বীর হিসাবে জগতে নাম করার স্বপ্নটা সফল হতো।
নিজের জীবনে নিজের যোগ্যতার যথার্থ মান পেতে লড়াই করে নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল, তাতে এক স্বনামধন্য  রাজপুত্র ও রাজ অস্ত্রগুরুকে টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল আর সেটাই কাল হয়েছিলো একলব্যের জীবনে।
যে অন্যায় তার সাথে হয়েছিলো তার বিচার করা স্বয়ং বিধাতাও প্রয়োজন মনে করেননি। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে একলব্য নামের সেই ছেলেটি যে স্বনামধন্য গুরু দ্রোনাচার্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষা লাভের আশায় গিয়েছিলো। কিন্তু যাকে শিষ্য রূপে গ্রহনই করলেন না,তার কাছ থেকে সেই ভয়ানক "গুরুদক্ষিণা" চাইতে গুরু দ্রোনাচার্যের ধর্মে বাঁধলো না?

শিক্ষকের কাছে সব বিদ্যার্থী সমান। সমাজে কে বড় কে ছোট, কে ধনী কে গরীব, কে কোন জাতের এইসব নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় একজন শিক্ষকের। কিন্তু একলব্য এই সমস্ত কিছুর শিকার হয়েছিলো।
গুরু দ্রোনাচার্যের শিষ্য না হয়েও গুরুর আদেশ মান্য করে গুরুর প্রতি সন্মান দেখিয়ে যে গুরুদক্ষিণা একলব্য দিয়েছিলো, ঠিক সেই একই গুরুদক্ষিণা দিতে কতটা সক্ষম ছিলো দ্রোনাচার্যের স্বীকৃতি দেওয়া শিষ্যগণ সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
গুরুর প্রতি সন্মান প্রদর্শনে দ্রোনাচার্যের সব শিষ্যদের অনেক অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সমাজের উচ্চবর্গের রাজনীতির শিকার একলব্য।

Nepotism এর শিকার হওয়া একলব্যরা সেই মহাভারতের যুগ থেকে আজও একই ভাবে নিজেদের প্রতিভা যোগ্যতার মুল্য পাওয়ার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে।
পৌরাণিক যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত চলে আসা এই স্বজনপোষণ ধারার বলি হয়েছে এমন একলব্যের সংখ্যা কম নয়, হয়তো আগামী দিনেও এই ধরার যাঁতাকলে পরে আরও কত একলব্যকে হারাতে হবে এবং তাদের প্রতিভার কথা আমরা সাধারণ মানুষরা কোনোদিন জানতে পারবো না। কারন "একলব্যদের" কথা, তাদের প্রতিভার কথা, যোগ্যতার কথা জানতে দেওয়া হয়না। সব ধামাচাপা দেওয়া হয়।

মহাভারতের "একলব্য" হোক বা আজকের     Sushant Singh Rajput   এদের নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করাটাই অন্যায় কারন, এদের কোনো so called Godfather ছিলো না।তার ওপর এরা কেউ রাজপরিবারের সন্তান ছিলো না বা কোনো "খান","জোহর", "চোপড়া", " কাপুর" পরিবারের জন্ম নেয়নি। তাই একলব্যের  হারিয়ে যাওয়া বা    Sushant Singh Rajput এর মৃত্যুতে সমাজের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।





Creditor :  Internet

Copyright : Rakasree Banerjee

মন্তব্যসমূহ

  1. খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন আপনি । সত্যিই তো বাস্তব এটা । এটাও nepotism ছিল । কিন্তু নানা ভার্সন এ শুনে শুনে এই মূল গল্প গুলো হারিয়ে গেছে । আমরা ততটাই শুনি বা শুনতে চাই যা বহুল প্রচারিত। একলব্য র ওপর যেটা হয়েছিলো সেটা ও রাজা র ছেলে না বলেই । আজও চলে আসছে এই প্রথা ।

    উত্তরমুছুন
  2. দিদি তোমার বেশ কয়েকটা লেখা আমি পরেছি। খুব ভাল লেখা তোমার। আমাদের জন্য লিখতে থাকো। নতুন করে রামায়ন মহাভারত জানছি।
    KEEP IT UP

    উত্তরমুছুন
  3. Thanks Saikat ....আমার লেখা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ...
    আমি খুব চেষ্টা করবো ভালো লেখার...তুমিও বলতে পারো কেমন লেখা লিখলে ভালো হবে বা বিশেষ কোনো চরিত্র যাকে ভালো লাগে তোমার, আমাকে বলতে পারো আমি চেষ্টা করতে পারি লেখার।

    উত্তরমুছুন
  4. আপনার লেখা আমি সবকটা পড়েছি। আমার অনেক অজানা গল্প গুলো জানলাম। আমরা ওপর ওপর থেকেই রামায়ণ মহাভারত পড়েছি ।সব তবু জানা হয় নি । যেমন আমার মনে হয় সাত্যকি ,বর্বরিক এদের নিয়ে লেখা উচিত যারা অর্জুন কর্ণ এদের মাঝে ঢাকা পরে গেছে । আবার কর্ণ র মা রাধা । এই রকম character গুলো নিয়ে বেশি ভালো লেখা পাওয়া যায় না ।আরো হোয়ত অনেক আছে আমার ও জানা নেই ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam link in comment box

you may like

রামায়ণে বর্নিত পার্শ্বচরিত্রের প্রানীসমূহ আসলে কি ছিলো??? Relevancy of the non-human characters in RAMAYANA ....

পিতৃপক্ষ ও কিছু কথা