Karna was killed by his karma:- Mahabharat short Stories Summary
খুব সহজ ভাবে বললে বলা যায় অর্জুন অঞ্জলীকা অস্ত্র প্রয়োগ করে কর্ণকে বধ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কর্ণ বধের পেছনে অন্য আরো ঘটনা আছে; ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তির দ্বারা কর্ণকে প্রদত্ত কিছু অভিশাপ ও কয়েকজনের ষড়যন্ত্রই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সতেরোতম দিনে কর্ণ-অর্জুন দ্বৈরথের সময়ে কর্ণের 'বিজয়ী ভাগ্য ' বিপক্ষে গিয়েছিল।
আমি 'বিজয়ী ভাগ্য ' কথাটা বললাম বটে কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ বলে গিয়েছেন, মানুষ নিজের কর্মের দ্বারাই নিজের ভাগ্য নির্ধারন করে। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ মানুষকে নিজের কর্মের উপর জোর দিতে বলেছেন। শ্রীকৃষ্ণের এই কথাটি যে কতটা সত্যি সেটা কর্ণের জীবন কাহিনীই স্পষ্ট করে দেয়। অর্থাৎ কর্ণ নিজের অকাল মৃত্যুকে নিজেই ডেকে এনেছিলেন through his অপকর্ম।
মহাভারতে বর্ণিত আছে, ধনুর্বিদ্যা শিখতে কর্ণ যখন দ্রোনাচার্যর কাছে গেলেন তখন দ্রোনাচার্য এই বলে কর্ণকে শিক্ষা দিতে মানা করেছিলেন যে তিনি শুধু ক্ষত্রিয় অথবা ব্রাহ্মণ দেরই অস্ত্রবিদ্যা/ যুদ্ধবিদ্যা প্রদান করেন। কারন, বংশ পরিচয়ে কর্ণ ক্ষত্রিয় তো ছিলেনইনা, এমনকি ব্রাহ্মণও ছিলেননা। (যদিও কর্ণের এই বংশ পরিচয় সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল; এমনকি কর্ণ নিজেও নিজের বংশ পরিচয়ের আসল সত্যি তখনও জানতেনা কুন্তীর পুত্র হলেও একটি বিশেষ কারনবশত তিনি কর্ণকে গ্রহন করেননি। যদিও সেই প্রসঙ্গ এখানে আলোচনা করবনা)। পিতামহ ভীষ্মের রথের সারথী অধিরথের পালিত পুত্র কর্ণ একজন সুত বা নীচু জাতির মানুষের পরিচয়ে সারাজীবন কাটিয়েছিলেন। উপরন্তু সেই যুগে (দ্বাপর) সুতদের যুদ্ধবিদ্যা জানার খুব একটা প্রয়োজনও ছিলনা।
যাই হোক, দ্রোনাচার্যর আশ্রম থেকে অপমানিত হয়ে ফেরার পর আরেকটু বড় step নিয়ে কর্ণ দ্রোনাচার্যর গুরু পরশুরামের কাছে গিয়ে অস্ত্রবিদ্যা শেখার request জানালেন। কিন্তু এখানেও একটা obstacle ছিল, পরশুরাম আবার ব্রাহ্মনদের ছাড়া আর কাউকে অস্ত্রবিদ্যা শেখাতেননা। কর্ণ পড়লেন মহামুশকিলে; যেই অস্ত্রবিদ্যা শেখার তাঁর এত ইচ্ছা, সুত হওয়ার কারনে তার সেই ইচ্ছা বুঝি আর পূরন হলনা! নিরুপায় হয়ে কর্ণ এখানে একটি মারাত্মক মিথ্যা র আশ্রয় গ্রহন করলেন; পরশুরামের কাছে তিনি নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে পরিচয় দিয়ে সমস্তরকম অস্ত্রবিদ্যা গ্রহন করলেন। কিন্তু বিধি বাম ! দেবরাজ ইন্দ্রের চক্রান্তে কর্ণের সুত হওয়ার পরিচয় পরশুরামের কাছে প্রকাশ পেয়ে গেল। এই ঘটনায় প্রচন্ড রেগে গিয়ে পরশুরাম কর্ণকে অভিশাপ দিয়ে বসলেন যে, নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে মিথ্যা বলে কর্ণ যেইসমস্ত বিদ্যা পরশুরামের কাছ থেকে শিখেছেন, সেইসমস্ত বিদ্যা ই নিজের চরম প্রয়োজনের সময় কর্ণ ভুলে যাবেন। (প্রথম অভিশাপ)
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সতেরোতম দিনে কর্ণ-অর্জুন অন্তিম দ্বৈরথের সময় ঠিক এমনটাই ঘটেছিল কর্ণের সাথে। সেইসময় কর্ণ কোনপ্রকার দ্বৈবাস্ত্র বা ব্রহ্মাস্ত্রকে আহ্বান জানানোর মন্ত্রটাও মনে করতে পারেননি।
এমনটাই হয় তাদের সাথে যারা শিক্ষাগ্রহনের লোভে শিক্ষাগুরুকে মিথ্যা বলে অনৈতিকভাবে শিক্ষাগ্রহন করে। প্রকৃতির নিয়মানুসারে তাদের পতন ও বিনাশ অবশ্যম্ভাবি; শুধু সময়ের অপেক্ষা।- এই কথাগুলো কিন্তু আমার নিজের মনগড়া নয়, স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের। না, তাই বলে কর্ণকে লোভী বলতে আমি মোটেই রাজী নই; তবে পরশুরামের থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য অনীতির পথের আশ্রয় নেওয়ার অপরাধে কর্ণ যে অপরাধী এটাও আমি অস্বীকার করিনা।
পরশুরামের আশ্রম থেকেও পুনরায় অপমানিত ও বিতাড়িত হওয়ার পর কর্ণ যখন একদিন একা একা নিজের ধনুর্বিদ্যা practice করছিলেন তখন আচমকা একটি ঝোপের আড়ালে এক বন্য জন্তুর আভাস পেয়ে সেটিকে লক্ষ্য করে তীর চালিয়ে হত্যা করে ফেললেন। আসলে সেটি ছিল এক গরীব ব্রাহ্মণের একমাত্র সম্বল একটি গরু যেটি ঝোপের পিছনে একমনে ঘাস খাচ্ছিল। কাছে এসে দেখে কর্ণ বুঝলেন না জেনেই হোক কিন্তু গো- হত্যা করার 'অপরাধ' তিনি করে ফেলেছেন। নিজের 'সবেধন নীলমনি' গরুটিকে বেঘোরে মারা যেতে দেখে মানসিক ভাবে প্রচন্ড ভেঙে পড়ে গরীব ব্রাহ্মনটি কর্ণকে অভিশাপ দিয়ে বললেন কর্ণও যখন অসহায় অবস্থায় থাকবেন ও তাঁর attention অন্য কোন কাজে diverted থাকবে তখনই তিনি তাঁর শত্রূ র হাতে মারা পরবেন। আবার একটা same side goal খেয়ে বসলেন কর্ণ!
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কর্ণ-অর্জুন দ্বৈরথের সময় যখন কর্ণের রথের চাকা মাটিতে গেঁথে গেল তখন তীর-ধনুক সব রথেই ফেলে রেখে সম্পূর্ন নিরস্ত্র অবস্থায় কর্ণ মাটিতে নেমে এলেন চাকা তোলার জন্য । কর্ণ যখন একমনে রথের চাকা মাটি থেকে তোলার চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন সেই মুহুর্তে শ্রীকৃষ্ণের কথায় অর্জুন কর্ণকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করলেন। মারনবাণ। অঞ্জলীকা অস্ত্র। যা কর্ণের শিরোচ্ছেদ করে দেয়।
আরেকবার, বছর দশেকের একটি ছোট্ট গরীব মেয়ে ঘি-এর পাত্র হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল, অসাবধানতাবশত হঠাৎ পাত্রটি তার হাত থেকে পড়ে গেল ও সমস্ত ঘি মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল। এই অবস্থায় বাড়ি গেলে তো তার বাবা-মা তাকে প্রচন্ড বকাবকি করবে, শাস্তি দেবে- এই ভেবে মেয়েটি ভীষন কাঁদতে শুরু করল। দয়াবৎসল কর্ণ তখন সেইখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। মেয়েটির কান্না শুনে তার কাছে গিয়ে কান্নার কারন জিঞ্জাসা করলেন। বাচ্চা মেয়েটার মুখে সব শুনে মহাশক্তিধর কর্ণ ঘি মিশ্রিত মাটি তুলে দু'হাতে চাপ দিয়ে তা থেকে ঘি আলাদা করে পুনরায় পাত্রে ভরতে শুরু করলেন। একবার ভাবুন, মাটি থেকে ঘি আলাদা করতে কীপরিমান জোর কর্ণ প্রয়োগ করেছিলেন! মাতা বসুন্ধরা এতে অসহনীয় ব্যথা অনুভব করছিলেন; ব্যথা সইতে না পেরে তিনিও কর্ণকে শাপ দিলেন, বললেন, যেভাবে কর্ণ তাঁকে দু'হাতে চেপে ধরেছিলেন সেইভাবে তিনিও একদিন কর্ণের রথের চাকা চেপে ধরবেন আর তখন কর্ণকে কোনরকম সাহায্য তো করবেনইনা উল্টে চেষ্টা করবেন কর্ণ যাতে দূর্বল থেকে দূর্বলতর হয়ে ওঠেন।
কথায় বলে, মায়ের অভিশাপও সন্তানদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে যায়, কিন্তু কোথায়? কর্ণের জীবনেতো মা বসুন্ধরার এই অভিশাপও তো সত্যি হয়েছিল! যুদ্ধের মাঝে রথের চাকা আচমকা 'মাটি'তে গেঁথে গেলে কর্ণ তাঁর সারথী মদ্ররাজ শল্য কে approach করলেন সেটি তুলে আনার জন্য, কিন্তু শল্য রাজী হলেননা। মদ্র দেশের মহারাজ শল্য কে দূর্যোধন কর্ণের রথের সারথী হবার শাস্তি দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু মাটিতে নেমে রথের চাকা ওঠানোর মতো কাজ করে নিজের রাজমর্যাদাকে অপমান করতে চাননি শল্য। উপায়ান্তর না দেখে তীর -ধনুক সব রথেই ফেলে রেখে কর্ণ নিজেই রথ থেকে নেমে পড়লেন চাকাটিকে মাটি থেকে ওঠানোর জন্য । যদিও কর্ণের অনেক চেষ্টা সত্বেও সে চাকা মাটি থেকে ওঠেনি। তার আগেই অর্জুনের তীর কর্ণকে নিজের নিশানা বানিয়ে ফেলেছিল।
অভিশাপ-অভিশাপ-অভিশাপ! মূলত এই তিনটি অভিশাপ সেদিন একসাথে strike না করলে সম্মুখ সমরে কর্ণকে হারানো অর্জুনের পক্ষে এতটা সহজ হতনা। এটা সবচেয়ে ভালো করে জানতেন শ্রীকৃষ্ণ। যার জন্য যুদ্ধের 16-17 দিন পর্যন্ত অর্জুনের রথ একনাগাড়ে বেশিক্ষন কর্ণের রথের সামনে তিনি রাখতেননা।
যুদ্ধের আগে কর্ণকে দূর্বল করে তুলবার জন্য দেবতারাও একেবারে উঠেপরে লেগেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র তো একবার ব্রাহ্মনের ছদ্মবেশে এসে 'দাতা' কর্ণের কাছ থেকে তাঁর কবচ-কুন্ডল পর্যন্ত দানে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইন্দ্র জানতেন যতদিন ঐ কবচ-কুন্ডল কর্ণের কাছে আছে ততদিন সে invincible ও তাঁর বরপুত্র অর্জূনের বিজয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
যুদ্ধের একটু আগের একটা ঘটনা- কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সেদিন ত্রয়োদশতম দিন। কৌরবদের commander in chief দ্রোনাচার্যর plan করা 'চক্রব্যূহ ' অর্জুনপুত্র অভিমন্যু প্রবেশ করলে কৌরবরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করলেন। নিজের শেষ সময়ে অভিমন্যু কর্ণের কাছে একটু জল চেয়েছিল কারণ কর্ণ যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন তার পাশেই ছিল একটি জলাশয়। কিন্তু কর্ণ অভিমন্যু জল তো দিলেনইনা বরং তলোয়ার দিয়ে তাকে হত্যা ই করে দিলেন। হয়ত বন্ধু দূর্যোধনের কাছে নিজেকে বেশি বিশ্বস্ত প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন কর্ণ। পরে, যুদ্ধের সতেরোতম দিনে এই জলাশয়ের কাদা-মাটিতেই কর্ণের রথের চাকা আটকে যায়। (যুদ্ধ পরবর্তীকালে যখন রুক্মিনী শ্রীকষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, সারাজীবন অকাতরে দান ধর্ম করে যাওয়া 'দানবীর' কর্ণের রথের চাকা শেষ সময়ে কেন এভাবে মাটিতে বসে গিয়ে তাঁর মৃত্যুর কারণ ঘটাল তখন শ্রীকষ্ণ রুক্মিনীকে উপরের ঘটনাটি বলে বললেন, মানছি কর্ণ একজন মহান দানবীর ছিলেন, কেউই তাঁর কাছ থেকে কিছু চাইতে গিয়ে খালি হাতে কখনও ফেরেননি ; কিন্তু দেবী, একজন মৃতপ্রায় ব্যক্তি কে তার শেষসময়ে জল না দেওয়াটা ঘোরতর অন্যায় ও গুরুতর পাপ আর এই একটি পাপই কারো জীবনের সমস্ত পুণ্যকে এক মুহুর্তে মিথ্যা প্রমাণ করে দিতে সক্ষম।) কর্ণের রথের চাকা এমনি এমনি সেদিন মাটিতে বসে যায়নি। সবই কর্ণের পাপের ফল।
যুদ্ধ শুরুর অনেক আগের একটি ঘটনা - সেদিন হস্তিনাপুরের রাজসভায় দ্রৌপদীর দুৰ্ভাগ্যজনক বস্ত্রহরনের সময় কর্ণ করলেনকি দ্রৌপদীকে পাঁচ পতির পত্নী 'বেশ্যা ' বলে আবার একটি বড়সর blunder করে বসলেন। আসলে রাগে-অপমানে-দুঃখে-প্রতিশোধস্পৃহায় কর্ণের মুখ দিয়ে সেদিন কথাটা বেড়িয়ে গেছিল! কিন্ত ধনুক থেকে তীর আর মুখ থেকে কথা একবার বেড়িয়ে গেলে return করানোর আর কোন chance থাকেনা। সুতরাং কর্ণের পাপের খাতে আরেকটা পাপ বাড়ল!
ইংরেজিতে একটা কথা আছে, 'karma has no menu, you will be served what you deserve'; ইংরাজির 'karma' বা সংস্কৃতের 'কর্ম' আমাদের সবার জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে বা বলা যায় কর্মই আমাদের জীবন নিয়ন্ত্রন করে। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, 'দু'দিন আগে হোক বা দু'দিন পরে কর্মের ফল মানুষকে জীবদ্দশাতেই ভোগ করতে হবে। (যদিও এই কর্মফল কোনো কোনো সময়ে মানুষের জন্মান্তরকেও ছাড়েনা। তবে এ নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করা যাবে।) কর্মফল ভোগের সবথেকে বড় প্রমানটা কর্ণ দিয়ে গেছিলেন। তাই এমনটা বললেও একদমই ভুল বলা হবেনা যে, Karna was killed by his karma where Arjuna was just the medium.
সূর্যদেবের বরপুত্র -কুন্তীর বড়পুত্র- হস্তিনাপুরের রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হয়েও নিজের যোগ্য সম্মান বা যোগ্য পরিচয় কোনো দিন পাননি বরং একজন সুতের পরিচয় নিয়ে প্রিয়জনদের থেকে দূরে থেকেই কর্ণকে জীবন কাটাতে হয়েছিল উপরন্তু এইসমস্ত অভিশাপ ও ষড়যন্ত্র কর্ণের জীবনকে ওলট-পালট করে দিয়েছিল। তার উপরে শুধুমাত্র নিজের স্বার্থে নিজের পাঁচ পুত্রের জীবনের আশঙ্কা দেখে কুন্তী কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ঠিক আগের দিন কর্ণকে তাঁর আসল বংশ পরিচয়ের সথে অবগত করিয়েছিলেন। হয়ত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ না হলে কর্ণ কোনদিনই জানতে পারতেন না যে যুধিষ্ঠির -অর্জুনের মত তিনিও কুন্তীর পুত্র- কৌন্তেয়।
নিজের জন্মদাত্রী মা ও প্রিয়জনদের থেকে এমন অবহেলা পেলেও কর্ণ সম্মান ও মর্যাদা পেলেন দূর্যোধনের থেকে। কর্ণকে অঙ্গদেশের রাজা ঘোষণা করলেন দূর্যোধন (যদিও এতে দূর্যোধনের স্বার্থ নিহিত ছিল)। এইকারনেই যুদ্ধে দূর্যোধনের পরাজয় অবশ্যম্ভাবি জেনেও কর্ণ কৌরব দের পক্ষ পরিত্যাগ করতে চাননি। দূর্যোধনের প্রতি তাঁর 'মিত্র বাৎসল্য ' ও পান্ডব-দ্রৌপদী তথা কুন্তীর প্রতি রাগ ও অভিমানের জন্যই কৌরবদের সাথে অধর্মের পথে চলতে কর্ণ কোন দ্বিধা বোধ করেননি।
পরবর্তীতে শ্রীকৃষ্ণও কর্ণকে বহুবার বলেছিলেন কৌরব পক্ষ ছেড়ে পান্ডব পক্ষে চলে আসতে, সত্য ও ধর্মের জন্য লড়াই করতে; শ্রীকৃষ্ণ এও বললেন যে তিনিও জন্মমুহুর্ত থেকেই তিনি নিজের বাবা-মা কে ছেড়ে অন্য কারো কাছে বড় হয়েছেন। নিজের আসল জন্ম পরিচয় তাঁকেও ছাড়তে হয়েছিল, তাঁকেও এক গোয়ালার পরিচয়ে বড় হতে হয়েছিল; কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি অধর্মের পথে চলার পাপ করেননি। এরপরেও কিন্তু কর্ণ দূর্যোধন বা কৌরব পক্ষ ছেড়ে পান্ডবপক্ষে আসেননি; এতটাই committed ছিলেন তিনি বন্ধু দূর্যোধনের প্রতি।
ধর্মের পথ ছেড়ে অধর্মের পথে চলে দূর্যোধনকে সাহায্য করার জন্য কর্ণকে শেষমেশ চরম শাস্তি (অকাল মৃত্যু) পেতে হয়েছিল। কথিত আছে, দেহরক্ষার পর তিনি যখন এই মৃত্যুলোক ছেড়ে অমৃতলোকে যাচ্ছিলেন তখন তার উপর দেবতারা 'পুষ্পবৃষ্টি' করছিলেন। খুব সম্ভবত কর্ণই একমাত্র মানুষ যে নিজের অন্তিম যাত্রায় খোদ দেবতাদের কাছ থেকে এমন সম্মান পেয়েছিলেন।
কর্ণের জীবন থেকে এই বিষয়টি আমাদের শিক্ষনীয় যে, আমাদের সকলেরই ফলের আশা না করে কর্ম করে যাওয়া উচিত। কারণ, আমগাছ লাগিয়ে শীতকালে তা থেকে কমলালেবুর আশা করা বৃথা।
আমি 'বিজয়ী ভাগ্য ' কথাটা বললাম বটে কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ বলে গিয়েছেন, মানুষ নিজের কর্মের দ্বারাই নিজের ভাগ্য নির্ধারন করে। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ মানুষকে নিজের কর্মের উপর জোর দিতে বলেছেন। শ্রীকৃষ্ণের এই কথাটি যে কতটা সত্যি সেটা কর্ণের জীবন কাহিনীই স্পষ্ট করে দেয়। অর্থাৎ কর্ণ নিজের অকাল মৃত্যুকে নিজেই ডেকে এনেছিলেন through his অপকর্ম।
মহাভারতে বর্ণিত আছে, ধনুর্বিদ্যা শিখতে কর্ণ যখন দ্রোনাচার্যর কাছে গেলেন তখন দ্রোনাচার্য এই বলে কর্ণকে শিক্ষা দিতে মানা করেছিলেন যে তিনি শুধু ক্ষত্রিয় অথবা ব্রাহ্মণ দেরই অস্ত্রবিদ্যা/ যুদ্ধবিদ্যা প্রদান করেন। কারন, বংশ পরিচয়ে কর্ণ ক্ষত্রিয় তো ছিলেনইনা, এমনকি ব্রাহ্মণও ছিলেননা। (যদিও কর্ণের এই বংশ পরিচয় সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল; এমনকি কর্ণ নিজেও নিজের বংশ পরিচয়ের আসল সত্যি তখনও জানতেনা কুন্তীর পুত্র হলেও একটি বিশেষ কারনবশত তিনি কর্ণকে গ্রহন করেননি। যদিও সেই প্রসঙ্গ এখানে আলোচনা করবনা)। পিতামহ ভীষ্মের রথের সারথী অধিরথের পালিত পুত্র কর্ণ একজন সুত বা নীচু জাতির মানুষের পরিচয়ে সারাজীবন কাটিয়েছিলেন। উপরন্তু সেই যুগে (দ্বাপর) সুতদের যুদ্ধবিদ্যা জানার খুব একটা প্রয়োজনও ছিলনা।
যাই হোক, দ্রোনাচার্যর আশ্রম থেকে অপমানিত হয়ে ফেরার পর আরেকটু বড় step নিয়ে কর্ণ দ্রোনাচার্যর গুরু পরশুরামের কাছে গিয়ে অস্ত্রবিদ্যা শেখার request জানালেন। কিন্তু এখানেও একটা obstacle ছিল, পরশুরাম আবার ব্রাহ্মনদের ছাড়া আর কাউকে অস্ত্রবিদ্যা শেখাতেননা। কর্ণ পড়লেন মহামুশকিলে; যেই অস্ত্রবিদ্যা শেখার তাঁর এত ইচ্ছা, সুত হওয়ার কারনে তার সেই ইচ্ছা বুঝি আর পূরন হলনা! নিরুপায় হয়ে কর্ণ এখানে একটি মারাত্মক মিথ্যা র আশ্রয় গ্রহন করলেন; পরশুরামের কাছে তিনি নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে পরিচয় দিয়ে সমস্তরকম অস্ত্রবিদ্যা গ্রহন করলেন। কিন্তু বিধি বাম ! দেবরাজ ইন্দ্রের চক্রান্তে কর্ণের সুত হওয়ার পরিচয় পরশুরামের কাছে প্রকাশ পেয়ে গেল। এই ঘটনায় প্রচন্ড রেগে গিয়ে পরশুরাম কর্ণকে অভিশাপ দিয়ে বসলেন যে, নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে মিথ্যা বলে কর্ণ যেইসমস্ত বিদ্যা পরশুরামের কাছ থেকে শিখেছেন, সেইসমস্ত বিদ্যা ই নিজের চরম প্রয়োজনের সময় কর্ণ ভুলে যাবেন। (প্রথম অভিশাপ)
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সতেরোতম দিনে কর্ণ-অর্জুন অন্তিম দ্বৈরথের সময় ঠিক এমনটাই ঘটেছিল কর্ণের সাথে। সেইসময় কর্ণ কোনপ্রকার দ্বৈবাস্ত্র বা ব্রহ্মাস্ত্রকে আহ্বান জানানোর মন্ত্রটাও মনে করতে পারেননি।
এমনটাই হয় তাদের সাথে যারা শিক্ষাগ্রহনের লোভে শিক্ষাগুরুকে মিথ্যা বলে অনৈতিকভাবে শিক্ষাগ্রহন করে। প্রকৃতির নিয়মানুসারে তাদের পতন ও বিনাশ অবশ্যম্ভাবি; শুধু সময়ের অপেক্ষা।- এই কথাগুলো কিন্তু আমার নিজের মনগড়া নয়, স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের। না, তাই বলে কর্ণকে লোভী বলতে আমি মোটেই রাজী নই; তবে পরশুরামের থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য অনীতির পথের আশ্রয় নেওয়ার অপরাধে কর্ণ যে অপরাধী এটাও আমি অস্বীকার করিনা।
পরশুরামের আশ্রম থেকেও পুনরায় অপমানিত ও বিতাড়িত হওয়ার পর কর্ণ যখন একদিন একা একা নিজের ধনুর্বিদ্যা practice করছিলেন তখন আচমকা একটি ঝোপের আড়ালে এক বন্য জন্তুর আভাস পেয়ে সেটিকে লক্ষ্য করে তীর চালিয়ে হত্যা করে ফেললেন। আসলে সেটি ছিল এক গরীব ব্রাহ্মণের একমাত্র সম্বল একটি গরু যেটি ঝোপের পিছনে একমনে ঘাস খাচ্ছিল। কাছে এসে দেখে কর্ণ বুঝলেন না জেনেই হোক কিন্তু গো- হত্যা করার 'অপরাধ' তিনি করে ফেলেছেন। নিজের 'সবেধন নীলমনি' গরুটিকে বেঘোরে মারা যেতে দেখে মানসিক ভাবে প্রচন্ড ভেঙে পড়ে গরীব ব্রাহ্মনটি কর্ণকে অভিশাপ দিয়ে বললেন কর্ণও যখন অসহায় অবস্থায় থাকবেন ও তাঁর attention অন্য কোন কাজে diverted থাকবে তখনই তিনি তাঁর শত্রূ র হাতে মারা পরবেন। আবার একটা same side goal খেয়ে বসলেন কর্ণ!
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কর্ণ-অর্জুন দ্বৈরথের সময় যখন কর্ণের রথের চাকা মাটিতে গেঁথে গেল তখন তীর-ধনুক সব রথেই ফেলে রেখে সম্পূর্ন নিরস্ত্র অবস্থায় কর্ণ মাটিতে নেমে এলেন চাকা তোলার জন্য । কর্ণ যখন একমনে রথের চাকা মাটি থেকে তোলার চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন সেই মুহুর্তে শ্রীকৃষ্ণের কথায় অর্জুন কর্ণকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করলেন। মারনবাণ। অঞ্জলীকা অস্ত্র। যা কর্ণের শিরোচ্ছেদ করে দেয়।
আরেকবার, বছর দশেকের একটি ছোট্ট গরীব মেয়ে ঘি-এর পাত্র হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল, অসাবধানতাবশত হঠাৎ পাত্রটি তার হাত থেকে পড়ে গেল ও সমস্ত ঘি মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল। এই অবস্থায় বাড়ি গেলে তো তার বাবা-মা তাকে প্রচন্ড বকাবকি করবে, শাস্তি দেবে- এই ভেবে মেয়েটি ভীষন কাঁদতে শুরু করল। দয়াবৎসল কর্ণ তখন সেইখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। মেয়েটির কান্না শুনে তার কাছে গিয়ে কান্নার কারন জিঞ্জাসা করলেন। বাচ্চা মেয়েটার মুখে সব শুনে মহাশক্তিধর কর্ণ ঘি মিশ্রিত মাটি তুলে দু'হাতে চাপ দিয়ে তা থেকে ঘি আলাদা করে পুনরায় পাত্রে ভরতে শুরু করলেন। একবার ভাবুন, মাটি থেকে ঘি আলাদা করতে কীপরিমান জোর কর্ণ প্রয়োগ করেছিলেন! মাতা বসুন্ধরা এতে অসহনীয় ব্যথা অনুভব করছিলেন; ব্যথা সইতে না পেরে তিনিও কর্ণকে শাপ দিলেন, বললেন, যেভাবে কর্ণ তাঁকে দু'হাতে চেপে ধরেছিলেন সেইভাবে তিনিও একদিন কর্ণের রথের চাকা চেপে ধরবেন আর তখন কর্ণকে কোনরকম সাহায্য তো করবেনইনা উল্টে চেষ্টা করবেন কর্ণ যাতে দূর্বল থেকে দূর্বলতর হয়ে ওঠেন।
কথায় বলে, মায়ের অভিশাপও সন্তানদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে যায়, কিন্তু কোথায়? কর্ণের জীবনেতো মা বসুন্ধরার এই অভিশাপও তো সত্যি হয়েছিল! যুদ্ধের মাঝে রথের চাকা আচমকা 'মাটি'তে গেঁথে গেলে কর্ণ তাঁর সারথী মদ্ররাজ শল্য কে approach করলেন সেটি তুলে আনার জন্য, কিন্তু শল্য রাজী হলেননা। মদ্র দেশের মহারাজ শল্য কে দূর্যোধন কর্ণের রথের সারথী হবার শাস্তি দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু মাটিতে নেমে রথের চাকা ওঠানোর মতো কাজ করে নিজের রাজমর্যাদাকে অপমান করতে চাননি শল্য। উপায়ান্তর না দেখে তীর -ধনুক সব রথেই ফেলে রেখে কর্ণ নিজেই রথ থেকে নেমে পড়লেন চাকাটিকে মাটি থেকে ওঠানোর জন্য । যদিও কর্ণের অনেক চেষ্টা সত্বেও সে চাকা মাটি থেকে ওঠেনি। তার আগেই অর্জুনের তীর কর্ণকে নিজের নিশানা বানিয়ে ফেলেছিল।
অভিশাপ-অভিশাপ-অভিশাপ! মূলত এই তিনটি অভিশাপ সেদিন একসাথে strike না করলে সম্মুখ সমরে কর্ণকে হারানো অর্জুনের পক্ষে এতটা সহজ হতনা। এটা সবচেয়ে ভালো করে জানতেন শ্রীকৃষ্ণ। যার জন্য যুদ্ধের 16-17 দিন পর্যন্ত অর্জুনের রথ একনাগাড়ে বেশিক্ষন কর্ণের রথের সামনে তিনি রাখতেননা।
যুদ্ধের আগে কর্ণকে দূর্বল করে তুলবার জন্য দেবতারাও একেবারে উঠেপরে লেগেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র তো একবার ব্রাহ্মনের ছদ্মবেশে এসে 'দাতা' কর্ণের কাছ থেকে তাঁর কবচ-কুন্ডল পর্যন্ত দানে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইন্দ্র জানতেন যতদিন ঐ কবচ-কুন্ডল কর্ণের কাছে আছে ততদিন সে invincible ও তাঁর বরপুত্র অর্জূনের বিজয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
যুদ্ধের একটু আগের একটা ঘটনা- কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সেদিন ত্রয়োদশতম দিন। কৌরবদের commander in chief দ্রোনাচার্যর plan করা 'চক্রব্যূহ ' অর্জুনপুত্র অভিমন্যু প্রবেশ করলে কৌরবরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করলেন। নিজের শেষ সময়ে অভিমন্যু কর্ণের কাছে একটু জল চেয়েছিল কারণ কর্ণ যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন তার পাশেই ছিল একটি জলাশয়। কিন্তু কর্ণ অভিমন্যু জল তো দিলেনইনা বরং তলোয়ার দিয়ে তাকে হত্যা ই করে দিলেন। হয়ত বন্ধু দূর্যোধনের কাছে নিজেকে বেশি বিশ্বস্ত প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন কর্ণ। পরে, যুদ্ধের সতেরোতম দিনে এই জলাশয়ের কাদা-মাটিতেই কর্ণের রথের চাকা আটকে যায়। (যুদ্ধ পরবর্তীকালে যখন রুক্মিনী শ্রীকষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, সারাজীবন অকাতরে দান ধর্ম করে যাওয়া 'দানবীর' কর্ণের রথের চাকা শেষ সময়ে কেন এভাবে মাটিতে বসে গিয়ে তাঁর মৃত্যুর কারণ ঘটাল তখন শ্রীকষ্ণ রুক্মিনীকে উপরের ঘটনাটি বলে বললেন, মানছি কর্ণ একজন মহান দানবীর ছিলেন, কেউই তাঁর কাছ থেকে কিছু চাইতে গিয়ে খালি হাতে কখনও ফেরেননি ; কিন্তু দেবী, একজন মৃতপ্রায় ব্যক্তি কে তার শেষসময়ে জল না দেওয়াটা ঘোরতর অন্যায় ও গুরুতর পাপ আর এই একটি পাপই কারো জীবনের সমস্ত পুণ্যকে এক মুহুর্তে মিথ্যা প্রমাণ করে দিতে সক্ষম।) কর্ণের রথের চাকা এমনি এমনি সেদিন মাটিতে বসে যায়নি। সবই কর্ণের পাপের ফল।
যুদ্ধ শুরুর অনেক আগের একটি ঘটনা - সেদিন হস্তিনাপুরের রাজসভায় দ্রৌপদীর দুৰ্ভাগ্যজনক বস্ত্রহরনের সময় কর্ণ করলেনকি দ্রৌপদীকে পাঁচ পতির পত্নী 'বেশ্যা ' বলে আবার একটি বড়সর blunder করে বসলেন। আসলে রাগে-অপমানে-দুঃখে-প্রতিশোধস্পৃহায় কর্ণের মুখ দিয়ে সেদিন কথাটা বেড়িয়ে গেছিল! কিন্ত ধনুক থেকে তীর আর মুখ থেকে কথা একবার বেড়িয়ে গেলে return করানোর আর কোন chance থাকেনা। সুতরাং কর্ণের পাপের খাতে আরেকটা পাপ বাড়ল!
ইংরেজিতে একটা কথা আছে, 'karma has no menu, you will be served what you deserve'; ইংরাজির 'karma' বা সংস্কৃতের 'কর্ম' আমাদের সবার জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে বা বলা যায় কর্মই আমাদের জীবন নিয়ন্ত্রন করে। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, 'দু'দিন আগে হোক বা দু'দিন পরে কর্মের ফল মানুষকে জীবদ্দশাতেই ভোগ করতে হবে। (যদিও এই কর্মফল কোনো কোনো সময়ে মানুষের জন্মান্তরকেও ছাড়েনা। তবে এ নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করা যাবে।) কর্মফল ভোগের সবথেকে বড় প্রমানটা কর্ণ দিয়ে গেছিলেন। তাই এমনটা বললেও একদমই ভুল বলা হবেনা যে, Karna was killed by his karma where Arjuna was just the medium.
সূর্যদেবের বরপুত্র -কুন্তীর বড়পুত্র- হস্তিনাপুরের রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হয়েও নিজের যোগ্য সম্মান বা যোগ্য পরিচয় কোনো দিন পাননি বরং একজন সুতের পরিচয় নিয়ে প্রিয়জনদের থেকে দূরে থেকেই কর্ণকে জীবন কাটাতে হয়েছিল উপরন্তু এইসমস্ত অভিশাপ ও ষড়যন্ত্র কর্ণের জীবনকে ওলট-পালট করে দিয়েছিল। তার উপরে শুধুমাত্র নিজের স্বার্থে নিজের পাঁচ পুত্রের জীবনের আশঙ্কা দেখে কুন্তী কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ঠিক আগের দিন কর্ণকে তাঁর আসল বংশ পরিচয়ের সথে অবগত করিয়েছিলেন। হয়ত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ না হলে কর্ণ কোনদিনই জানতে পারতেন না যে যুধিষ্ঠির -অর্জুনের মত তিনিও কুন্তীর পুত্র- কৌন্তেয়।
নিজের জন্মদাত্রী মা ও প্রিয়জনদের থেকে এমন অবহেলা পেলেও কর্ণ সম্মান ও মর্যাদা পেলেন দূর্যোধনের থেকে। কর্ণকে অঙ্গদেশের রাজা ঘোষণা করলেন দূর্যোধন (যদিও এতে দূর্যোধনের স্বার্থ নিহিত ছিল)। এইকারনেই যুদ্ধে দূর্যোধনের পরাজয় অবশ্যম্ভাবি জেনেও কর্ণ কৌরব দের পক্ষ পরিত্যাগ করতে চাননি। দূর্যোধনের প্রতি তাঁর 'মিত্র বাৎসল্য ' ও পান্ডব-দ্রৌপদী তথা কুন্তীর প্রতি রাগ ও অভিমানের জন্যই কৌরবদের সাথে অধর্মের পথে চলতে কর্ণ কোন দ্বিধা বোধ করেননি।
পরবর্তীতে শ্রীকৃষ্ণও কর্ণকে বহুবার বলেছিলেন কৌরব পক্ষ ছেড়ে পান্ডব পক্ষে চলে আসতে, সত্য ও ধর্মের জন্য লড়াই করতে; শ্রীকৃষ্ণ এও বললেন যে তিনিও জন্মমুহুর্ত থেকেই তিনি নিজের বাবা-মা কে ছেড়ে অন্য কারো কাছে বড় হয়েছেন। নিজের আসল জন্ম পরিচয় তাঁকেও ছাড়তে হয়েছিল, তাঁকেও এক গোয়ালার পরিচয়ে বড় হতে হয়েছিল; কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি অধর্মের পথে চলার পাপ করেননি। এরপরেও কিন্তু কর্ণ দূর্যোধন বা কৌরব পক্ষ ছেড়ে পান্ডবপক্ষে আসেননি; এতটাই committed ছিলেন তিনি বন্ধু দূর্যোধনের প্রতি।
ধর্মের পথ ছেড়ে অধর্মের পথে চলে দূর্যোধনকে সাহায্য করার জন্য কর্ণকে শেষমেশ চরম শাস্তি (অকাল মৃত্যু) পেতে হয়েছিল। কথিত আছে, দেহরক্ষার পর তিনি যখন এই মৃত্যুলোক ছেড়ে অমৃতলোকে যাচ্ছিলেন তখন তার উপর দেবতারা 'পুষ্পবৃষ্টি' করছিলেন। খুব সম্ভবত কর্ণই একমাত্র মানুষ যে নিজের অন্তিম যাত্রায় খোদ দেবতাদের কাছ থেকে এমন সম্মান পেয়েছিলেন।
কর্ণের জীবন থেকে এই বিষয়টি আমাদের শিক্ষনীয় যে, আমাদের সকলেরই ফলের আশা না করে কর্ম করে যাওয়া উচিত। কারণ, আমগাছ লাগিয়ে শীতকালে তা থেকে কমলালেবুর আশা করা বৃথা।
Karna was
killed by his karma:
In a very simple way, it can be said that
Arjuna killed Karna by using Anjalika weapon.
But in reality, there are other cases behind Karna’s slaughter; On the seventeenth day of the Kurukshetra
war, some of the curses and conspiracies given by Karna by different people at
different times went against Karna's 'triumphant fate' during the Karna-Arjun
duality.
I have spoken of 'winning destiny' but as
Krishna has said, man determines his destiny through his actions. That is, Sri Krishna tells people to
emphasize their own actions. Karna's
life story makes it clear how true Krishna's words are. That is, Karna called himself to his untimely
death through his misdeeds.
According to the Mahabharata, when Karna
approached Dronacharya to learn archery, Dronacharya refused to teach Karna
that he gave only Kshatriyas or Brahmins with weaponry / warfare. Because Karna was not a Kshatriya, not even a
Brahmin. (Although Karna's identity was
completely false; even Karna himself did not know the origin of his family
identity, but he did not accept Karna for a special reason. I will not discuss
that context here). Karna, the adopted
son of Adhiratha, the charioteer of his grandfather Bhishma's chariot, spent
his entire life as a Sut or lower caste man.
Also, in that era (Dwapar) there was not even a need to know the
battlefield of the Sutas.
However, after returning from Dronacharya's
ashram in disgrace, Karna took another big step and went to Dronacharya's guru
Parashuram and requested him to learn weaponry.
But there was also an obstacle, Parasurama again taught no one except
the Brahmins. Karna read with great
difficulty; Whatever his desire to learn weaponry, his desire to be fit, I do
not understand and fulfill! Helpless,
Karna took refuge in a deadly lie here; To Parasuram, he introduced himself as
a Brahman and took all kinds of weaponry.
But badluck was with him! In the
plot of Indra, the identity of Karna's became known to Parasuram. On this occasion, Parasuram became enraged at
Karna, who, in hiding his real identity, and cursed that karna would forget all
the scholars who had learned from Parasuram at the time of his extreme need. (First curse)
This is exactly what happened to Karna during
the last duel between Karna and Arjuna on the seventeenth day of the Battle of
Kurukshetra. At that time Karna could
not even remember the mantra of invoking any kind of divine arms or Brahmastra.
This is the case with those who teach immoral
education by lying to the teacher for greed.
According to the laws of nature, their downfall and destruction are
inevitable; Just waiting for the time. -
These words are not from my own mind but from Lord Krishna himself. No, that's why I'm not at all willing to call
Karna greedy; However, I do not deny
that Karna is guilty of taking refuge in the path of immorality in order to
learn from Parshuram.
After Karna was practicing his archery alone
one day after being reproached and expelled from Parasuram's ashram, Suddenly,
at the sight of a wild animal hiding under a bush, struck it and shot it with
an arrow. In fact, it was the only
possession of a poor Brahmin, a cow that was grazing in the bushes. Coming closer, Karna did not understand but
he has committed the 'crime' of killing cows.
The poor Brahmin cursed Karna and said that he would die at the hands of
his enemy only when Karna was helpless and his attention was diverted to some
other purpose. Karna got the same side
goal again!
During the battle of Kurukshetra, during the
Karna-Arjuna duo, when the wheel of Karna's chariot got stuck in the ground,
Karna left all the weapons in chariot and came down to the ground completely unarmed to
lift the wheel. At the moment when Karna
was engrossed in trying to lift the wheel of the chariot from the ground,
Arjuna aimed an arrow at Karna at Krishna's words. “ Anjalika” weapon. Which beheads the ear.
Another time, a poor adolescent girl was
returning home with a pot of “ghee” in her hand, when she inadvertently dropped
the pot and all the “ghee” fell to the ground.
The girl started crying thinking that her parents would scold her and
punish her if she went home in this condition.
The kind hearted Karna was passing by then. Hearing the girl's crying, he went to her and
asked her why she was crying. After
hearing , the superpowered karna lifted the mixed soil and “ghee” and pressed
it with two hands and separated the ghee from it and started filling the
container again. Think of it once, as
the key to separating the ghee from the soil, how much power applied ! Mother Bashundhara was experiencing
unbearable pain; without cursing, she cursed Karna, saying that just as the karna
pressed him in both hands, he would one day hold the wheel of the chariot in
his hand then he would not do anything to help the Karna, so that the Karna
would become weak.
In a word, mother's curse also becomes a
blessing for children, but where? This
curse of mother Bashundhara also came true in Karna's life! In the midst of the battle, when the wheel of
the chariot was suddenly set on the 'soil', Karna approached his fellow Madra
king Salya to lift it, but Salya did not agree.
It is true that the king of the Madras country punished Shalya for being
the charioteer of Duryodhana Karna's chariot, but Shalya did not want to insult
his royal dignity by going down to the ground and lifting the wheel of the
chariot. Seeing the way forward, Karna
himself came down from the chariot to raise the wheel from the ground, leaving
the weapons all over the chariot. Even
though Karna's many attempts, the wheel did not rise from the ground. Before that, Arjuna's arrow had made Karna
his target.
Cursed-curse-curse! Originally, it would not have been so easy
for Arjun to lose Karna in the ensuing battle if these three curses had not
struck together that day. Lord Krishna
knew it best. For which he did not keep
Arjuna's chariot in front of Karna's chariot for 16-17 days of the war.
Before the battle, the gods also stepped up to
weaken Karna. Devraj Indra once came to
the Brahmins disguise and took his earrings to his armor. Indra knew that as long as that armor-coil
was with Karna, he was invincible and the greatest obstacle in the way of
victory of his great-grandson Arjuna.
One day before the war - the thirteenth day of
the battle of Kurukshetra. When Arjuna's
son Abhimanyu entered the 'chakravyuh' planned by Dronacharya's commander in
chief, the Kauravas ruthlessly killed him.
At his last moment Abhimanyu asked Karna for some water because there
was a pond next to where Karna was standing.
But Karna did not give water, but killed him with a sword. Maybe Karna wanted to prove himself more
loyal to Duryodhana. Later, on the
seventeenth day of the war, the wheels of the chariot of Karna got stuck in the
mud of this pond. (Later in the war,
when Rukmini asked Srikrishna why the wheel of Karna's chariot, which had been
a lifelong benefactor, had fallen to the ground and caused his death,
Srikrishna told Rukmini the above incident.
Karna who Never returned anyone empty-handed, but Goddess, this time he
did not give water to a dying person in his last days.. This is sheer evil and sin, and this is a
very serious sin in one's life.Which can destroy all the previous virtue)
Karna's chariot wheels could not be granted on the ground that day. All are the results of the sin of Karna.
An incident long before the start of the war -
that day during the unfortunate stripping of Draupadi in the royal court of
Hastinapur, Karna called Draupadi the wife of five husbands a 'whore' and sat
down again in a big blunder. In fact, in
anger, humiliation, grief, revenge, the word went out of Karna's mouth that
day! But once the arrows from the bow
and the word go out of the mouth, there is no chance of returning. So another sin increased in the field of sin
of Karna!
There is a saying in English, 'karma has no
menu, you will be served what you deserve';
English 'karma' or Sanskrit 'karm' has a huge impact on the lives of all
of us or it can be said that karma controls our lives. Sri Krishna says, "The result of karma,
whether it is two days before or two days later.But one have to get the return
in lifetime. (Although this karma does
not leave the human reincarnation at some point. This can be discussed another
day.) The greatest proof of the return of karma was Karna.
Therefore, it would not be wrong to say that Karna was killed by his
karma where Arjuna was just the medium.
Though the heir to the throne of Hastinapur,
the eldest son of Suryadeva, the heir to the throne of Hastinapur, never got
his own honor or worthy identity, but Karna had to live far away from loved
ones with the identity of a yarn, besides cursing and conspiring against
him. Seeing the danger of the life of
his five sons only for his own sake, Kunti had informed Karna of his original
descent on the day before the Kurukshetra war.
Perhaps if it were not for the battle of Kurukshetra, Karna would never
have known that like Yudhisthira-Arjuna, he was also Kunti's son-Kaunteya.
Although he received such neglect from his
birth mother and loved ones, Karna received the honor and dignity from
Duryodhana. Karna was declared the King
of Angadesh by Duryodhana (though it contained the interests of
Duryodhana). This is why Karna did not
want to abandon the Kauravas, knowing that Duryodhana's defeat in the war was
inevitable. Karna did not hesitate to go
on the path of wrongdoing with the Kauravas because of his 'friendship' and
Pandav-Draupadi, as well as his anger and pride towards Kunti, for Duryodhana
respectively.
Later, Lord Krishna also told Karna many times
to leave Kaurava's side and come to Pandava's side, to fight for truth and
religion; Srikrishna also said that he
too had grown up with someone other than his birth parents. He too had to give up his original birth
identity, he too had to grow up as a herdsman;
Yet, he did not sin in the course of lawlessness. Even then, Karna did not come away from
Duryodhana or Kaurav to the Pandavas; He
was so committed to his friend Duryodhan.
Karna eventually had to suffer extreme
punishment (premature death) to help him overcome the path of religion by
turning away from the path of lawlessness.
It is said that the gods were showering flowers on him when he left this
mortal world and went to the nectar world after leaving his body. It is very likely that Karna is the only person
who received such honor from the gods on his last journey.
We can learn from Karna's life that we should
all act without expecting anything in return.
Because, with the mango planted in the winter, it is futile to expect a
lotus leaf.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in comment box