UDUPI King Played The Key Role in Kurukshetra War ... ( কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে উডুপি রাজ এর অবদান) Mahabharata stories
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ঠিক কত বছর আগে হয়েছিলো সেই নিয়ে মতভেদ আছে। বেশ কিছু ভারতীয় গবেষকগনের মতে খ্রীস্টপূর্ব ৩১০০- ৩১০২ সালে হয়েছিলো এই মহাযুদ্ধ। আঠারো দিন ধরে চলেছিলো যুদ্ধ। কতজন এই যুদ্ধে সামিল হয়েছিলো তার হিসাব কারো জানা আছে কি?
মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের বিবরণ নিয়ে লেখা আছে এগারো অক্ষৌহিণী কৌরবদের পক্ষে ও সাত অক্ষৌহিণী পাণ্ডবদের পক্ষে লড়েছিলো।এখন প্রশ্ন হলো অক্ষৌহিণী কথাটির অর্থ কি?
অক্ষৌহিণী কথাটির যে মানে পাওয়া যায় সেটা হলো-- পদাতিক-অশ্ব-হস্তী-রথ এই চার বাহিনীর নাম অক্ষৌহিণী। পদাতিক মানে যারা পায়ে হেঁটে যুদ্ধ করে, অশ্বারোহী যারা অশ্ব মানে ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করে, হস্তী অর্থ্যাৎ যারা হাতিতে সাওয়ার হয়ে যুদ্ধ করে এবং রথে চড়ে যারা যুদ্ধে অংশ নেয়। এইবার একটা হিসাব করা যাক, মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পদাতিক সৈন্য ছিলো, অশ্বারোহীতে অশ্ব ছিলো এবং এর সাথে প্রত্যেক অশ্বের ওপর একজন করে সৈন্য ছিলো, হস্তী মানে হাতী ছিলো এখানে মাথায় রাখতে হবে প্রত্যেক হাতীতে একজন করে মাহুত ও একজন যোদ্ধা ছিলো আর রথ নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন যারা সেই রথে একজন সারথি, ও একজন যোদ্ধা ছিলেন, এবং রথ টানার জন্য এক বা একাধিক ঘোড়াও ছিল । এক অক্ষৌহিণী মানে দশ লক্ষ সৈন্য এবং তার সাথে অশ্ব হস্তী অর্থ্যাৎ কত শত সহস্র মানুষ ও প্রাণী ছিলো এই যুদ্ধের অংশীদার ভাবা যায়!!! এছাড়াও আরও অনেক ধরনের লোক নিযুক্ত ছিলো এই যুদ্ধে, যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি কিন্তু এদের ছাড়াও যুদ্ধ সম্পুর্ণ হওয়া সম্ভব ছিলো না। যেমন যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বৈদ্যগন, হাতী ঘোড়া দেখাশোনা করার লোকজন, যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র দেখভাল করার লোক, তুরী ভেরী ( যুদ্ধ শুরুর আগে বাজানো হতো)যারা বাজাতেন, এত রাজা মহারাজারা ছিলেন তাদের দাস দাসী সব মিলিয়ে এদের সংখ্যাটাও নেহাত কম ছিলোনা।
আমার এত হিসাব নিকাশের কারনটা হলো এই যে, এতগুলো মানুষ ও পশুদের খাওয়ার ব্যবস্থা কি ছিলো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে? অভুক্ত অবস্থায় যুদ্ধ করা যায় না, সে মানুষই হোক বা হাতী ঘোড়া।
যদি এটা ধরে নেওয়া যায়, কুরুক্ষেত্রের আশেপাশে বনভূমি থেকে এইসব পশুদের খাদ্য সংগ্রহ করা হতো কিন্তু এত মানুষের খাদ্যর জোগাড় হতো কিভাবে? অরন্য থেকে পাওয়া যায় মানুষের খাদ্য ফল ছাড়া আর যা কিছু সে সবই কাচাঁমাল, তাকে খাদ্যের উপযোগী করতে হবে। শুধু ফল জল খেয়ে এত বড় যুদ্ধ করেছিলেন সব রথী মহারথীরা এটাও বিশ্বাস করার মতো না, নিজেরাই নিজেদের রান্না করেছিলেন এমনটাও আশা করা ঠিক হবেনা কারন সূর্য উঠার সাথে সাথেই যুদ্ধ শুরু হতো এবং শেষ হতো সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে। ক্লান্ত বিধস্ত হয়ে শিবিরে ফিরে সৈন্যরা রান্না করে খেয়েছিলো এটাও কি সম্ভব?
তাহলে নিশ্চয়ই এত সহস্রাধিক মানুষের খাওয়ার কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছিলো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে, কি সেই ব্যবস্থা? চলুন দেখে নেওয়া যাক -----
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সেই সময়ের সমগ্র ভারতবর্ষের সব রাজ্যের রাজারা অংশ নিয়েছিলেন। কেউবা পাণ্ডবদের পক্ষে কেউ আবার কৌরবদের পক্ষে। শুধু দুটো রাজ্য ছিলো যারা এই যুদ্ধে কোনো পক্ষের হয়ে লড়াই করেননি। এর মধ্যে একটি হলো দ্বারকা, এই রাজ্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলো এবং অপরটি হলো উডুপি রাজ্য ( বর্তমান কর্ণাটকের পশ্চিমে আরব সাগরের তীরে যে উডুপি জেলা আছে অতীতে সেটাই মহাভারতে উডুপি রাজ্য ছিল বলে জানা যায়)।
যুদ্ধ শুরুর আগে ভারতের নানা রাজ্যে কৌরব ও পান্ডবরা দূত পাঠিয়েছিলেন সেখানকার রাজাদের যুদ্ধে যোগদান করার অনুরোধ জানিয়ে। শোনা যায়, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ উডুপি রাজ্যে গিয়েছিলেন রাজাকে যুদ্ধে আমন্ত্রণ জানাতে কিন্তু উডুপির রাজা কৃষ্ণকে হাতজোড় করে বলেন তিনি এই যুদ্ধে কোনো পক্ষের হয়েই অংশ নিতে চান না। কারন হিসাবে তিনি বলেন, যুদ্ধে যে প্রানহানী রক্তক্ষয় হবে তাতে নিজের বা তার রাজ্যের কোনো মঙ্গল হবে না, তাই তিনি এই যুদ্ধ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে চায়।কিন্তু স্বয়ং কৃষ্ণ যখন এসেছেন তাকে ফেরানোর ধৃষ্টতা উডুপি রাজ্য করবে না, সেই জন্য উডুপি রাজ এই যুদ্ধের যারা যোদ্ধা তাদের সবার খাওয়ার দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন কৃষ্ণের কাছে, এই ভাবে তিনি যুদ্ধের অংশীদার হতে চাইলেন যুদ্ধ করে নয়। কৃষ্ণ উডুপি রাজের সেই প্রস্তাব মেনে নিয়ে বলেন, আহারের যোগান দেওয়ার কাজ তুমি নাও এই যুদ্ধে সেই ভার তোমার।
সেই কথা মতো পুরো আঠারো দিন কুরুক্ষেত্রের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন উডুপি রাজ। সারাদিন ধরে যখন যুদ্ধ চলছে কুরুক্ষেত্রে তখন উডুপি রাজার লোকজন রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকতো। দিনের শেষে যুদ্ধ ফেরত ক্লান্ত মানুষগুলোর খাওয়ার তৈরী করে রাখার গুরু দায়িত্বটা যত্নের সাথে পালন করেছিলেন উডুপি রাজ ও তার লোকেরা। এত লোকের রান্নার কাজটা মোটেই সহজ ছিলো না। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পদাতিক সৈন্য ছিলো ১,০৯,৩৫০ জন, ৬৫,৬১০ ছিলো শুধু ঘোড়া,প্রত্যেক ঘোড়ার পিঠে সৈন্য, হাতীর সংখ্যা ছিলো ২১,৮৭০ প্রতিটি হাতীর পিঠে একজন মাহুত ও একজন যোদ্ধা, রথের সংখ্যা ছিলো ২১,৮৭০ আর রথ চালানোর জন্য প্রতিটি রথে সারথি ও একজন করে বীর --- এই চতুরঙ্গ বাহিনী হলো এক অক্ষৌহিণী। পদাতিক - হস্তী - অশ্ব - রথ এই চারটি মিলে চতুরঙ্গ। এক অক্ষৌহিণীর হিসাব যদি এটা হয় তাহলে কৌরবদের এগারো অক্ষৌহিণী ও পাণ্ডবদের সাত অক্ষৌহিণীর মোট সংখ্যা কত দাড়ায় সেই হিসাবে আর গেলাম না। তবে হিসাব বলছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ যুদ্ধ করেছিলেন।
এতজনের জন্য রান্না করতে সম্ভবত উডুপি রাজ্যের বেশির ভাগ লোকই এই কাজে যোগ দিয়েছিলো, সেই সংখ্যাটাও হাজার পঞ্চাশের কম নয়।
তবে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিলো, সেটা হলো প্রতিদিন কতো লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিদিন যুদ্ধে বহু বীর মহারথী সৈন্য প্রান দিচ্ছে, যখন রান্না চলছে তখন যুদ্ধও চলছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে.... এমতবস্থায় সঠিক হিসাব করাটা সহজ ছিলো না উডুপি রাজের পক্ষে। কম রান্না করলে অভুক্ত থেকে যাবে আবার বেশী হলে নষ্ট হবে খাওয়ার। সেই সময় ভারতে আনাজপাতি, শস্যর কমতি ছিলো না হয়তো তবুও খাওয়ার নষ্ট হওয়া ঠিক না। তাহলে কি উপায় বের করেছিলেন উডুপি রাজ রোজকার খাওয়ার হিসাবের?
উডুপি রাজকে এই চিন্তা থেকে উদ্ধার করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
উডুপি রাজ নিজে কৃষ্ণের জন্য রাতের খাওয়ার নিয়ে যেতেন শিবিরে। খাওয়ার বলতে এক বাটি সেদ্ধ বাদাম এই ছিলো শ্রীকৃষ্ণের রাতের খাবার। সেই বাটি থেকে কৃষ্ণ কিছু বাদাম খেয়ে বাকিটা ফিরিয়ে দিতেন। যেদিন যেই কয়টি বাদাম কৃষ্ণ খেতেন তার থেকে উডুপি রাজ পরদিনের রান্নার হিসাব পেয়ে যেতেন। রাজা গুনে দেখতেন কৃষ্ণ কয়টি বাদাম খেয়েছেন মানে একশোটা বাদাম যদি তিনি খেতেন তার মানে পরের দিন এক লাখ লোক মারা যাবে যুদ্ধে। একটি বাদাম মানে এক হাজার এই ছিলো হিসাব। সেই হিসাব মাথায় রেখেই রান্না হতো এবং যুদ্ধ চলাকালীন কোনোদিন খাদ্য কম পরেনি বা বেশী হয়নি। প্রায় ৫০০০ বছর আগে এই যুদ্ধ হয়েছিলো, তখন শস্য ফলমুল মদ মাংস জল এইসবের অভাব ছিলো না কিন্তু এত রান্না করার জন্য জায়গা, রাধুনি, বাসনপত্র... কম ঝক্কি ছিলো না মানতেই হবে। তিনি কি কর্ণাটক থেকে রান্না করে কুরুক্ষেত্রে নিয়ে আসতেন? সে তো অনেকটা পথ... তিনি কি তাহলে কুরুক্ষেত্রের কাছাকাছি কোথাও তার এই রান্নার কাজটা সম্পন্ন করেছিলেন? হয়তো তাই...
একদিন অর্জুন উডুপি রাজকে পরিমান মতো খাওয়ার তৈরীর রহস্য জিজ্ঞেস করেন এবং সব জানতে পেরে কৃষ্ণকে বলেন আগামীকাল যুদ্ধে কি হবে, কে মারা যাবে কে বাঁঁচবে সবই আপনি জানেন, সবই যখন ঠিক হয়ে আছে তাহলে কেন আমরা যুদ্ধে শুধু শুধু পুতুল সেজে মারামারি করে মরি ! উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন..... "কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেনু কদাচন " অর্থ্যাৎ কর্মে তোমার অধিকার, কর্মফলে নয়।
শুরু থেকে শেষ কি হবে জানা সত্ত্বেও পুরো মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ নিজের কর্ম করে গেছেন। কাল কি হবে জানা থাকলেও আজকের কাজকে হেলা না করার শিক্ষাই তিনি দিতে চেয়েছেন। তাঁর চারপাশের লোকজনের মধ্যে একটু স্নেহের পাত্র যারা ছিলেন তারা ঈশ্বরের এই লীলা বুঝতে পেরেছিলেন যাদের মধ্যে উডুপি রাজ একজন।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উডুপি রাজকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন যুগ যুগ ধরে তোমার বংশধরেরা এই খাওয়ার পরিবেশনের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করবে। " ধোসা" – এই সুস্বাদু দক্ষিণ ভারতীয় খাবারটি এই উডুপি রাজ্যেই প্রথম তৈরী হয়েছিলো বলে শোনা যায়। শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদে সমৃদ্ধ উডুপি আজও সারা ভারতের মধ্যে রান্নায় বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছে।
এই উডুপি রাজ ও তার রাজ্যের লোকেরাই ভারতের ইতিহাসে প্রথম ক্যাটারার (Caterer) মেনে নেওয়াই যায়।
উল্লেখ্যঃ মহাভারতে কোথাও উডুপি আবার কোথাও উডিপী নাম পাওয়া যায়। উচ্চারণগত কারনে হয়তো।
তথ্যসুত্র : ইন্টারনেট
কপিরাইট : Rakasree Banerjee
Good one
উত্তরমুছুন