রামায়ণ উত্তর রঘু বংশ..... (Stories After Ramayana)



রামায়ণের কাহিনি সবার জানা।
সূর্যবংশীয় রাজা দিলীপের পুত্র রঘু,  রঘুর পুত্র অজ আর অজের পুত্র দশরথ।  ইনি অয্যোধ্যার রাজা ছিলেন। তাঁর তিন স্ত্রী ছিলো কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। এই দশরথের পুত্ররা হলেন রাম, ভরত,  লক্ষ্মণ এবং শত্রুঘ্ন।
দশরথ এর কিভাবে  এই চারপুত্রের প্রাপ্তি হয়েছিলো সেই কাহিনিও সকলের জানা। শোনা যায় পুত্র ছাড়াও তাঁর একটি কন্যা ছিলো যার নাম শান্তা।
রামায়ণ মানেই রামচন্দ্র ও তাঁর বনবাস, লঙ্কা জয়, বনবাস শেষ করে অয্যোধ্যায় ফিরে আসা, তাঁর বীরত্বের কথা।
 কিন্তু আমরা  যেখানে রামায়ণ শেষ হয় বলে জানি ( সীতার অগ্নি পরীক্ষা আর শেষে পাতালপ্রবেশ) আমার কৌতূহল সেখানেই।  এরপর কি হয়েছিলো? হতেই পারে রাম লক্ষ্মণ ভরত ও শত্রুঘ্ন তাদের পরিবার নিয়ে সুখে দুঃখে দিন কাটিয়েছিলো।
আমার কৌতূহলটা হলো রাম ও তাঁর তিন ভাই এর পরিবার পরিচয় নিয়ে। মানে রামায়ণের বর্নিত রামচন্দ্র ও তাঁর তিন ভাইদের Next generation, মানে দশরথের পুত্রদের কথা তো সবাই জানি কিন্তু তাঁর নাতি নাতনি দের কথা কারো জানা আছে কি? কেউ কেউ হয়তো বলবেন--  "হ্যাঁ জানি তো, কেনো লব ও কুশ "। একদম ঠিক বলেছেন কিন্তু তারা তো রামচন্দ্র ও সীতার পুত্র। দশরথের তো আরও তিন  পুত্র  ছিলো, তাদের স্ত্রী ও ছিলো তাহলে সন্তানও নিশ্চয়ই ছিলো?
আমার কাহিনি ঠিক এখান থেকেই শুরু এবং জেনে রাখুন জ্যেষ্ঠ পুত্র রাম বাদে দশরথের বাকি তিন পুত্রেরই সন্তান ছিলো। তার মানে দশরথের নাতিপুতির সংখ্যাটা শুধুই দুটি নয়।

রামায়ণের এই চরিত্রগুলো নিয়েই কিছু খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা আজ আমার....
তার আগে রামচন্দ্র ও তাঁর তিন ভাই এর বিবাহটা অল্প কথায় সেরে ফেলি ( কম বেশি যা সবারই জানা)।


" হরধনু " ভঙ্গ করে রামচন্দ্র স্বয়ংবর সভায় সীতাকে বিয়ে করেছিলেন। সীতা ছিলেন মিথিলার রাজা জনকের কন্যা। ওই সভাতেই দশরথের বাকি তিন পুত্রেরও বিয়ে হয়। জনকের কনিষ্ঠ কন্যা ঊর্মিলার সাথে বিবাহ করেন লক্ষ্মণ। ভরত ও শত্রুঘ্ন বিয়ে করেন জনকের ভাই কুশধ্বজের কন্যাদ্বয়কে। তাঁরা হলেন ভরতের স্ত্রী মাণ্ডবী ও শত্রুঘ্ন এর স্ত্রী শ্রুতকীর্তি,  সম্পর্কে যারা সীতা ঊর্মিলার তুতো বোন। এরপর চারভাই তাদের বউদের নিয়ে অয্যোধ্যায় আসেন এবং রাজা দশরথের বয়স হয়ে যাওয়ার জন্য তিনি জ্যেষ্ঠ পুত্র রামচন্দ্রকে সিংহাসনে বসাতে চাইলেন।সমস্যার সূত্রপাত এখান থেকেই।  এরপর রামায়ণে যা যা ঘটনা ঘটেছিল সে আর নতুন করে লেখার প্রয়োজন নেই।

এই জায়গা থেকে কাহিনিটা একটু অন্যভাবে বলতে চাই...

বনবাস শেষ করে রামচন্দ্র সীতা ও লক্ষ্মণ অয্যোধ্যায় ফিরে আসলেন। কিন্তু প্রজারা সীতাকে ঠিক মেনে নিতে পারলো না। অতগুলো দিন পরপুরুষের বন্দী হয়ে থাকা সীতা নাকি আর পবিত্র নেই! প্রজাবৎসল রামচন্দ্র তাই সীতাকে আবার বনবাসে রেখে আসতে বলেন অনুজ লক্ষ্মণকে। প্রজাদের মন রাখতে রামচন্দ্র যখন এতবড় সিদ্ধান্ত নেন তখন সীতা গর্ভবতী। লক্ষ্মণ মাতৃসমা বউদি সীতার এই অপমান মেনে নিতে পারেন নি। কিন্তু জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রামচন্দ্রের আদেশ মান্য করা ছাড়া সারাজীবন যে কিছুই করেননি সেই লক্ষ্মণের কাছে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ আশা করাই বৃথা। যাই হোক, লক্ষ্মণ সেই অবস্থায় সীতাকে বনে না ছেড়ে বাল্মিকীর আশ্রমে রেখে আসেন। এই আশ্রমেই জন্ম হয় সীতার যমজ পুত্রদের, লব ও কুশ। রামচন্দ্র জানতেই পারলেন না তাঁর পিতা হওয়ার খবর। পরে রামচন্দ্র যখন অশ্বমেধ যজ্ঞ করছিলেন তখন তিনি লব কুশের সাথে পরিচিত হন এবং জানতে পারেন এরা তাঁরই পুত্র। এটা তো গেলো রাম ও সীতার পুত্রদের কথা। 


এবার রামচন্দ্রের তিন ভাই ও তাঁদের সন্তানদের জানা যাক...

লক্ষ্মণ এর স্ত্রী ঊর্মিলা দুই পুত্রের জননী ছিলেন। তাদের নাম ছিলো অঙ্গদ ও চন্দ্রকেতু।
ভরত ও মাণ্ডবীরও দুই পুত্র সন্তান হয়েছিলো, তক্ষ ও পুষ্কল।
রামচন্দ্রের সবচেয়ে ছোটো ভাই শত্রুঘ্ন এবং তার স্ত্রী শ্রুতকীর্তির সুবাহু ও শত্রুঘাতী নামে দুই পুত্র ছিলো।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে,  দশরথের মোট আটটি পোপৌত্র ( নাতি)  ছিলো। বেশ,  এবার প্রশ্ন হলো পরর্বতী সময় রঘুবংশের এই প্রজন্ম এর কি হয়েছিলো?
সীতার পাতালপ্রবেশ দিয়ে মহাকাব্য রামায়ণের সমাপ্তি ঘটে।

তারপর????

রামচন্দ্র ও তাঁর ভাইদের সন্তানদের কি হলো???

শুনুন তাহলে,  প্রথমে বলি রামের পুত্রদের কথা।

রামচন্দ্র - সীতার পুত্র লব ও কুশঃ
শোনা যায় রামচন্দ্র  কোশল রাজ্যকে দুইভাগে ভাগ করে শ্রাবস্তী ও কুশাবতী নামে দুটি নগর তৈরী করেন এবং লবকে শ্রাবস্তী নগরের রাজা করেন ও কুশাবতীর দায়িত্ব দেন কুশ কে।
বিন্ধ্য পর্বতের পাদদেশে ছিলো কুশাবতী রাজ্য। কাশী ও মৌর্য বংশ রামচন্দ্রের পুত্র কুশের বংশধর বলে জানা যায়।
লব শ্রাবস্তী রাজ্য ছাড়াও নিজের যোগ্যতায় তাঁর রাজ্য পশ্চিম ভারতের দিকে আরও বর্ধিত করেছিলেন। লাভাপুরী নামে একটি নগর লব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যার বর্তমান নাম "লাহোর" (পাকিস্তান)। রাজস্থানের মেবাররা লবের বংশধর বলে মানা হয়।

ভরত - মাণ্ডবীর পুত্রদ্বয় তক্ষ ও পুষ্কলঃ
কথিত আছে,  সিন্ধুনদের পূর্বদিকে প্রাচীন ভারতের শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান "তক্ষশিলা" স্থাপন করেছিলেন ভরত এর পুত্র তক্ষ।পরর্বতীতে গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার এই তক্ষশিলা দিয়েই জয়ের আশায় ভারতে ঢুকেছিলেন।
ভরতের অপর পুত্র পুষ্কল সিন্ধুনদের পশ্চিমে এক নগরের পত্তন করেন যার নাম দেন পুষ্কলাবতী।
তাহলে দেখা যাচ্ছে,  ভরতের দুইপুত্র সিন্ধুনদের দুই তীরকে  কেন্দ্র করে নিজেদের রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। জানা যায় খ্রীস্টপূর্ব চতুর্থ শতক পর্যন্ত তক্ষ ও পুষ্কলের রাজ্য বহাল ছিলো।

লক্ষ্মণ -- ঊর্মিলার পুত্রগণ অঙ্গদ ও চন্দ্রকেতুঃ

লক্ষ্মণ পুত্র অঙ্গদ কারুপদ নামে এক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং অপর পুত্র চন্দ্রকেতু মালবে চন্দ্রকান্তি নামে নগর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

শত্রুঘ্ন -- শ্রুতকীর্তির পুত্রগণ  সুবাহু ও শত্রূ ঘাতী :
শত্রুঘ্ন পুত্র সুবাহু উত্তর ভারতের রাজ্য মথুরার রাজা ছিলেন এবং শত্রুঘাতী ভারতের মধ্যে প্রদেশের রাজ্য বিদিশার রাজা ছিলেন।

এর থেকে জানা যায় রামচন্দ্র ও তাঁর তিন ভাই ভরত লক্ষ্মণ শত্রুঘ্ন এর পুত্রেরা পিতাদের পরে নিজ নিজ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে সসন্মানে রাজত্ব করেছিলেন।

রঘুবংশের এই প্রজন্মের সম্পর্কে এর বেশী তথ্য আমার জানা নেই। কারো জানা থাকলে আমাকে জানাবেন।

Creditor :  Internet
copyright : Rakasree Banerjee

মন্তব্যসমূহ

you may like

রামায়ণে বর্নিত পার্শ্বচরিত্রের প্রানীসমূহ আসলে কি ছিলো??? Relevancy of the non-human characters in RAMAYANA ....

Nepotism Is as old as Mahabharata !! মহাভারতও "Nepotism" দোষে দুষ্ট ( Mahabharata Stories )

পিতৃপক্ষ ও কিছু কথা