Shanta- The Neglected Character in RAMAYANA - রামায়ণের অবহেলিত চরিত্র শান্তা - ( history and mythology stories )






মহাকাব্য রামায়ণের Elite চরিত্রগুলোর মধ্যে স্থান না পাওয়া অবহেলিত একটি চরিত্র হলো  "শান্তা"।
এখন প্রশ্ন হলো, কে এই " শান্তা"?
কেনোই বা তিনি রামায়ণে বর্নিত Elite চরিত্রগুলোর সমভাগীদার?
সঠিক প্রশ্ন---- গুরুত্বপূর্ণ কেউ যদি না হয়ে থাকেন এই "শান্তা" তাহলে তো তাঁর পক্ষে বক্তব্য রাখার দাবি জানানো উচিৎ হবে না।

কিন্তু আমার দাবি জানানোটা খুবই যুক্তিযুক্ত, তাই আমি বেছে নিলাম,  আমার আজকের বিষয় মহাকাব্য রামায়ণে বিশেষভাবে অবহেলিত চরিত্র "শান্তা" কে ‌‌    ~~~

জন্ম পরিচয়ঃ~

শান্তা হলেন রামায়ণের অযোধ্যার রাজা দশরথ ও তাঁর বড় রানী কৌশ্যলার প্রথম সন্তান। বাল্মিকী রচিত রামায়ণে এই কন্যার উল্লেখ নেই, এই ব্যাপারে বাল্মিকী একেবারে Silent। অর্থাৎ দশরথের চার পুত্র রামচন্দ্র, ভরত, লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্নের দিদি ছিলেন এই শান্তা। তাহলে দেখা যাচ্ছে দশরথের প্রথম সন্তান কোনো পুত্র নয় তিনি ছিলেন একজন কন্যা। এই কন্যার জন্মের পর দশরথ - কৌশ্যলা খুব একটা খুশি হয়নি বলেই জানা যায়। কারন বংশ ও রাজ্যের দায়িত্ব একমাত্র "পুত্রেরা" নিতে সক্ষম ( যদিও আমি এই কথার বিন্দুমাত্র সমর্থন করি না)।
কারণটা ঠিক কি ছিলো, যে অযোধ্যার রাজকন্যা হয়েও Guest Appearance এর ভুমিকাতেও তাঁকে দেখা গেলো না? মেয়ে হয়ে জন্মেছিলেন বলেই কি তাঁকে উপেক্ষিত হয়ে কাটাতে হলো সারাজীবন?  হয়তো তাই, না হলে দশরথ পুত্র কামনায় যজ্ঞ করছিলেন কেনো? পুত্র ছাড়া বংশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না এই যুক্তিটি সেই অতি প্রাচীন যুগ থেকে আজও ভীষণভাবে সমাজে বিদ্যমান। তাই হয়তো অযোধ্যা দম্পতি তাদের নিজেদের কন্যাকে দত্তক দিয়েছিলেন অঙ্গরাজ রুম্পাদ ও তাঁর স্ত্রী ভার্ষিণী কে। অঙ্গরাজ পত্নী ভার্ষিণী ছিলেন সম্পর্কে অযোধ্যারাজ দশরথপত্নী কৌশ্যলার বোন।
জন্মসূত্রে অযোধ্যার মতো বিশাল রাজ্যের রাজকুমারী হয়েও শান্তাকে আশ্রয় নিতে হয় মাসির কাছে। তবে তাঁর দত্তক পিতামাতার কাছে যত্নে আদরে বেড়ে উঠেছিলেন শান্তা। শোনা যায়, শাস্ত্র বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিলো। তার মানে অঙ্গরাজ ও তাঁর স্ত্রী কন্যার স্নেহে পালন করা শান্তাকে বিদ্যালাভের সুযোগ দিয়েছিলেন। পালক পিতামাতার কাছে আদর যত্নে শিক্ষায় দীক্ষায় বড় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। 

বিবাহঃ

কথিত আছে, শান্তা ছিলেন খুবই রূপবতী। কিন্তু নিজের পালক পিতাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে অপরূপা শান্তাকে বিবাহ করতে হয়েছিলো একজন ঋষিকে। সেই ঋষির নাম ঋষ্যশৃঙ্গ। কেনো একজন ঋষিকে বিয়ে করতে হয়েছিলো রাজসুখে বড় হওয়া শান্তা কে?
কারনটা জানতে একটু বিস্তারিতভাবে বলার প্রয়োজন ---
পুরাণে আছে,  একবার দেবরাজ ইন্দ্র স্বর্গের অপ্সরা উর্বশীকে বিভাণ্ডক নামে এক ঋষির তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য মর্ত্যে পাঠান। সেই আজ্ঞা পালন করতে উর্বশী ধরাধামে এসে বিভাণ্ডকে মোহ দ্বারা আকৃষ্ট করেন এবং ঋষির ধ্যান নষ্ট করেন। এই মিলনের ফলে বিভাণ্ডকের ঔরসে উর্বশী গর্ভবতী হন ও এক পুত্রের জন্ম দেন। এই পুত্রই হলো ঋষ্যশৃঙ্গ । কিন্তু স্বর্গের অপ্সরা ঘর সংসার করেন না,  তাই পুত্রের জন্মের পর উর্বশী পুত্র ও বিভাণ্ডককে ছেড়ে স্বর্গে ফিরে যায়। এই ঘটনায় বিভাণ্ডকের মনে প্রচন্ড ক্ষোভ জন্মেছিল, এক তো ছলনার সাহায্যে তাঁর তপস্যা নষ্ট করেছে তার ওপর সদ্যোজাত পুত্রকে ছেড়ে বিভাণ্ডককে ছেড়ে উর্বশীর চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না এবং তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন নিজ পুত্র ঋষ্যশৃঙ্গকে পৃথিবীর সব নারীদের সংস্পর্শ থেকে দুরে রাখবেন। সেইমতো তিনি পুত্রকে নিয়ে লোকালয় থেকে বহুদূর গভীর অরন্যে একান্তে বড় করে তুলতে লাগলেন। মাতৃ কোল ছেড়ে প্রকৃতি মায়ের কোলে বেড়ে উঠেছিলেন ঋষ্যশৃঙ্গ।
এটা হলো ঋষ্যশৃঙ্গ এর জন্ম কাহিনি, যিনি পরে শান্তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

কিন্তু রাজকুমারী শান্তার সাথে ঋষ্যশৃঙ্গ এর বিয়ে হয়েছিলো সেই কাহিনি জানবো---
শান্তার পালক পিতা অঙ্গরাজ রুম্পাদ একবার কোনো কারনে এক ব্রাহ্মণের অপমান করেন এবং ফলস্বরূপ  সেই ব্রাহ্মণ রুম্পাদকে অভিশাপ দেন অঙ্গরাজ্য জলশূন্য হয়ে যাবে মানে খরা হবে। রুম্পাদ পড়লেন মহা মুশকিলে, ব্রাহ্ম তেজ বলে কথা... এ-তো ফলবেই। কাজটা ঠিক করেননি বুঝতে পেরে অঙ্গরাজ ব্রাহ্মণ এর কাছে ক্ষমাভিক্ষা চাইলেন। পালক পিতার বিপদ দেখে এবার শান্তা এগিয়ে আসে পিতা ও তাঁর রাজ্য বাঁচাতে। শান্তার কাতর প্রার্থনায় সেই ব্রাহ্মণ বিধান দেন যে, এমন একজন পুরুষ যে কি না জন্মের ঠিক পরের থেকেই কোনো নারীর সংস্পর্শে আসেননি এমন পুরুষ যদি অঙ্গরাজ্যে এসে শান্তাকে বিবাহ করে তবেই  খরা থেকে রক্ষা পাবে রাজ্য নতুবা নয়।
কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই না? যাই হোক, এরপর শান্তা কঠিন তপস্যার দ্বারা ঋষ্যশৃঙ্গ এর মন জয় করেন এবং অঙ্গরাজ্যে আমন্ত্রণ জানায় তাকে বিবাহ করার জন্য। শান্তা ও ঋষ্যশৃঙ্গ এর বিবাহের পর অঙ্গরাজ্য অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়। নিজের পালক পিতা ও তাঁর রাজ্য বাঁচাতে শান্তাকে রাজকুমারী হয়েও ঋষিপত্নীর জীবন বেছে নিতে হয়েছিলো। হয়তো এইভাবেই সে ঋণ শোধ করেছিলেন তাঁর পালক পিতা মাতার প্রতি।
শান্তা কিন্তু নিজের জন্মদাতা পিতা ও জন্মদায়িনী মাতার ঋণও শোধ করেছিলেন ( জানিনা কোনো ঋন ছিলো কি না, কারন জন্মের পরেই যাকে প্রায় ত্যাগ করেছিলেন অযোধ্যা রাজ দশরথ ও তাঁর বড় রানী কৌশ্যলা, তাঁদের কাছে শান্তা কি আদৌও ঋণী ছিলেন?)
শান্তার জন্মের পর বহু বছর অযোধ্যার রাজা দশরথের তিন রানি কৌশ্যলা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রার গর্ভে কোনো সন্তান (সন্তান অবশ্যই পুত্র হওয়া কাম্য ছিলো) জন্ম না নেওয়ায়, পুত্রশোকে দশরথ যখন প্রায় পাগল তখন হাল ধরেন দশরথের সেই ত্যাগ করা কন্যা শান্তা। তিনি স্বামী ঋষ্যশৃঙ্গকে অনুরোধ করেন অযোধ্যা রাজ দশরথের জন্য পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করতে। স্ত্রীর কথায় ঋষ্যশৃঙ্গ সরযূ নদীর তীরে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করেন এবং দশরথের ঘরে চার পুত্র জন্মগ্রহণ করেন, যাদের মধ্যে রামচন্দ্র ছিলেন বিষ্ণুর সপ্তম অবতার ( এই জন্ম কাহিনি সবার জানা)। ভাবা যায়! বিষ্ণুর অবতার রামচন্দ্রের জন্ম যার স্বামীর জন্য সম্ভব হলো, সেই শান্তা কি না রামায়ণে স্থান পেলো না???





পুত্রেষ্টি যজ্ঞ



চারপুত্র পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই দশরথ অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন,  কিন্তু তবুও কি নিজকন্যার এতবড় উপকারের কথা ভেবেছিলেন একবারও? মনে তো হয় না, কারন রাম, ভরত,লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন এর থেকে শান্তা বয়সে বড় ছিলেন, ওদিকে জন্মের পর থেকেই নিজ পিতামাতা, নিজ গৃহ, নিজ রাজ্য সব ছেড়ে অন্য জায়গায় বড় হওয়া এবং ভাইদের জন্মের আগেই বিবাহ হয়ে যাওয়া শান্তাকে দায়িত্ব নিয়ে কেউ ভাইদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো কি? দশরথ বা তাঁর স্ত্রীরা? কেউ দেয়নি, তাই আমরা রামায়ণে কোথাও শান্তার সাথে তাঁর ভাইদের কোনো সখ্যতা বা ভাই--বোনের সুমধুর সম্পর্কটা দেখতে পাইনা। অথচ যে না থাকলে রামচন্দ্র ও তাঁর ভাইদের জন্ম কাহিনিটা অন্য রকম হতো, সেই শান্তাকে বাদ দিলেও যে রামায়ণ ঠিক সম্পুর্ণ হবেনা।

রাজকুমারী শান্তা সারাজীবন নিজের পিতা ও পালক পিতার কার্যকে পূর্নতা দেওয়ার মাধ্যম হিসাবেই ব্যবহৃত হয়েছেন। এরজন্য তাঁর অভিমান দুঃখ হয়েছিল কি না সে খবর না রেখেও মহাকাব্য রামায়ণ    "সম্পুর্ন রামায়ণ "
এর আখ্যা পেয়েছে।

Creditor: Internet
copyright : Rakasree Banerjee

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please do not enter any spam link in comment box

you may like

রামায়ণে বর্নিত পার্শ্বচরিত্রের প্রানীসমূহ আসলে কি ছিলো??? Relevancy of the non-human characters in RAMAYANA ....

Nepotism Is as old as Mahabharata !! মহাভারতও "Nepotism" দোষে দুষ্ট ( Mahabharata Stories )

পিতৃপক্ষ ও কিছু কথা